রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। প্রবল শক্তিশালী ভূমিকম্পটি রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্রতম দশটি ভূমিকম্পের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
এর জেরে রাশিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র ও প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে জারি করা হয়েছে সতর্কতা; অনেক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু এলাকায় এরই মধ্যে সুনামির ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করেছে, কোথাও কোথাও আরও পরে আঘাত হানবে, এ কারণে সাগরের ঢেউ ও এর উচ্চতার দিকে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিবিড় নজর রাখছে। সুনামির তিনটি ঢেউয়ে রাশিয়ার সেভেরো–কুরিলস্ক বন্দর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বন্দরে বেঁধে রাখা একাধিক জাহাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে আরটি। শহরটির বেশিরভাগ অংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সতর্কতা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা তাস।
জাপান তীর সংলগ্ন ১৯ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে, সুনামির ঢেউ একদিনের বেশি সময় ধরে আছড়ে পড়তে পারে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি। দেশটির অনেককে উঁচু উঁচু সব ভবনের ছাদে আশ্রয় নিতে দেখা যাচ্ছে। ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল পেত্রোপাভলোভস্ক–কামচাটস্কি শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার পূর্ব–দক্ষিণ–পূর্বে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৯.৩ কিলোমিটার গভীরে। শুরুতে মাত্রা ৮ বলা হলেও পরে তা সংশোধন করে ৮.৮ করা হয়। এরপর ৬.৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়। রাশিয়ার দুর্গম ওই অঞ্চলে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্লুচেভস্কয় আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি, তবে আগ্নেয়গিরির অবস্থা নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামির ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ও ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর উপকূলে আঘাত হানছে। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে আছড়ে পড়েছে ৫ দশমিক ৫ ফুট (১ দশমিক ৭ মিটার) পর্যন্ত উঁচু ঢেউ। ওদিকে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ক্রিসেন্ট সিটিতে ৩ দশমিক ৬ ফুট (প্রায় ১ দশমিক ১ মিটার) উচ্চতার ঢেউ আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন জাতীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র। খবর বিডিনিউজের।
রাশিয়ার স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পটিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে। একুয়েডর, ইন্দোনেশিয়া, পেরু, কলম্বিয়াসহ আরও বেশ কিছু দেশে বিভিন্ন মাত্রার সুনামি ঝুঁকির সতর্কতা জারি রয়েছে। ফ্র্রেঞ্চ পলিনেশিয়াতেও সুনামি সতর্কতা জারি রয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
ইতিহাসের ষষ্ঠ তীব্রতম : কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে উৎপত্তি হওয়া ৮ দশমিক ৮ মাত্রার প্রবল শক্তিশালী ভূমিকম্পটি রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্রতম দশটি ভূমিকম্পের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ–পদার্থবিজ্ঞান ও টেকটোনিঙ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলেন ইয়েনেশাভস্কি বিবিসিকে এমনটি জানিয়েছেন। তিনি জানান, এটি ২০১০ সালে চিলির বিওবিওতে হওয়া ভূমিকম্প এবং ১৯০৬ সালে একুয়েডরের এস্মেরালদাসে হওয়া ভূমিকম্পের পাশাপাশি রেকর্ডকৃত ইতিহাসের ষষ্ঠ তীব্রতম ভূমিকম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছিল, চিলির ওই ভূমিকম্পটি কুইরিহুয়ে শহরের উপকূলে হয়েছিল। এই প্রবল শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫২৩ জন নিহত ও তিন লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল। আর একুয়েডরের ভূমিকম্পটিকে তখন ‘একুয়েডর–কলম্বিয়া ভূমিকম্প’ হিসেবে উল্লেখ করে ইউএসজিএস জানিয়েছিল, এই ভূমিকম্পের পরে শক্তিশালী সুনামি আঘাত হেনেছিল আর তাতে ১৫০০ মানুষ মারা পড়েছিল। ওই সুনামির ঢেউ অনেক উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের স্যান ফ্রান্সিসকো শহরেও আঘাত হেনেছিল।
ঘটনা হল, পঞ্চম তীব্রতম ভূমিকম্পটিও হয়েছিল রাশিয়ার এই কামচাটকা উপদ্বীপেই। উপদ্বীপের ক্রাই এলাকায়। ১৯৫২ সালে হওয়া এই ভূমিকম্পটি ছিল ‘বিশ্বের প্রথম রেকর্ডকৃত ৯ মাত্রার ভূমিকম্প’। এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় সৃষ্ট বিশাল সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপে আঘাত হেনেছিল আর তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।