রাশিয়ার হাতে নতুন পারমাণবিক অস্ত্র

আসলেই হুমকি নাকি পুতিনের তর্জন-গর্জন?

| রবিবার , ২ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেন যুদ্ধে প্রবীণ সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বুধবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার একটি নতুন অস্ত্র পরীক্ষার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পসাইডন’ নামের একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সুপার টর্পেডো পরীক্ষা চালিয়েছে। পুতিন বলেন, এর মতো অস্ত্র আর কোথাও নেই।

এই অস্ত্র মূলত একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত, পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন পানির নিচের ড্রোন যেটি টর্পেডোর মতো ছোড়া যায়। রুশ পার্লামেন্টের এক জ্যেষ্ঠ সদস্যের ভাষায়, পুরো একটি দেশকে অচল করে দিতে সক্ষম এই অস্ত্র। ২০১৮ সালে প্রথম এই অস্ত্রের কথা প্রকাশ্যে আসে। সে সময় রুশ গণমাধ্যমের দাবি ছিল, পসাইডন ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এবং এটি এমনভাবে রুট পরিবর্তন করতে পারে যে তাকে ঠেকানো অসম্ভব।

এই অস্ত্রের আগে গত ২১ অক্টোবর বুরেভেস্তনিক নামের নতুন একটি পারমাণবিক শক্তি চালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। তাদের দাবি, এ অস্ত্র বিশ্বের যে কোনও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। রাশিয়ার বলছে, বুরেভেস্তনিকের পাল্লা অসীম। এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনও দেশের কাছে নেই। তবে রাশিয়ার জন্য নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করা বা সেগুলোর প্রচার করা নতুন কিছু নয়। বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃতপক্ষে এসব অস্ত্রের সামরিক মূল্য নিয়ে প্রশ্ন আছে।

রাশিয়াবিশেষজ্ঞ মার্ক গ্যালিওটি বিবিসিকে বলেন, এসব মূলত বিশ্বকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো ‘আর্মাগেডন অস্ত্র’। এসব অস্ত্র বিশ্বকে ধ্বংস করতে চাইলে কেবল তখনই ব্যবহার করা যায়। গ্যালিওটি জানান, পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক দুটি এই ধরনের অস্ত্র। সেইসঙ্গে এগুলো ‘সেকেন্ডস্ট্রাইক’ অস্ত্র, যা প্রতিশোধমূলক ব্যবহারের জন্য তৈরি। তবে এই অস্ত্রগুলোর কার্যকরিতা নিয়ে সন্দেহ আছে। ২০১৯ সালে একটি রকেট ইঞ্জিন বিস্ফোরণে পাঁচ রুশ পারমাণবিক প্রকৌশলী মারা গিয়েছিলেন। কয়েকজন রুশ ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই রকেট ইঞ্জিন বুরেভেস্তনিকের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। খবর বিডিনিউজের।

দুইবছর পর লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) জানায়, এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পারমাণবিক প্রোপালশন ইউনিটের কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করা নিয়ে নানা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে আছে রাশিয়া। পসাইডন ও বুরেভেস্তনিক কোনটিই পুরোপুরি নতুন নয়। ২০১৮ সালে পুতিন নতুন অজেয় অস্ত্রের তালিকায় পসাইডন ও বুরেভেস্তনিকের নাম ঘোষণা করেছিলেন।

এখন আবারও এসব অস্ত্র নিয়ে নতুন করে আলোচনায় পুতিন। কিন্তু কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক দুই অস্ত্র নিয়ে পুতিনের ঘোষণা যতটা না নতুন, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে বাগে আনতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই কূটনৈতিক উদ্যোগ কার্যত ভেস্তে গেছে। হাঙ্গেরিতে নির্ধারিত ট্রাম্পপুতিন শীর্ষ বৈঠকও হঠাৎ স্থগিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এতটাই ভিন্ন যে, এ বৈঠকে কোনও ফল হত না।

হাঙ্গেরির বৈঠক না হওয়ার পরও ট্রাম্প রাশিয়ার দুটি বড় তেল কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে পুতিন হয়ত ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই নতুন অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ম্যাকেঞ্জি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস এর গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড হিথকোট বিবিসিকে বলেন, গ্রীষ্মকালীন যুদ্ধ মৌসুমের শেষের দিকে এসে রাশিয়ার পরিস্থিতি ভালো না। তাই রাশিয়ার পসাইডন এবং বুরেভেস্তনিক অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণাকে তাদের প্রচলিত সেনাশক্তির দুর্বলতার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা উচিত।

পুতিনের এমন হুমকিতে কাজও হয়েছে। ৩৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেনাবাহিনীকে আবার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেহেতু অন্যরাও পরীক্ষা চালাচ্ছে, আমাদেরও পরীক্ষা চালানো উচিত। যদিও এতদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পরীক্ষা শুরু করতে কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। ট্রাম্পের এই নির্দেশের পর রাশিয়া দ্রুত প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে। রাশিয়ার পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে ট্রাম্পকে ঠিকভাবে জানানো হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদা প্রকল্পের আড়াই বছর পার, মিলেনি সুফল
পরবর্তী নিবন্ধমির্জাপুলে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার ১