যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন নীতির বড় পরিবর্তনের এ তথ্য সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে জানিয়েছেন দেশটির এক কর্মকর্তা।
কিয়েভকে ওয়াশিংটনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের যুদ্ধ আরও তীব্র হবে আর তা তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন একজন জ্যেষ্ঠ রুশ আইনপ্রণেতা। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ সদস্য আন্দ্রি ক্লিশাস টেলিগ্রাম অ্যাপে বলেছেন, পশ্চিমা সংঘাত এমন মাত্রার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তা সকালের মধ্যে ইউক্রেইন রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংসাবশেষে পরিণত করার মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির প্রথম উপপ্রধান ভ্লাদিমির জবারফ বলেছেন, মস্কোর প্রতিক্রিয়া হবে তাৎক্ষণিক। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে নিয়ে যাওয়ার মতো অত্যন্ত বড় পদক্ষেপ এটি। খবর বিডিনিউজের।
কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস নিজের দেশের বাইরে ব্যবহারের অনুমতি চাইছিলেন। নতুন সিদ্ধান্তের খবরে গত রোববার তিনি বলেছেন, এই ধরনের বিষয় ঘোষণা করা হয় না, ক্ষেপণাস্ত্রই নিজেদের কথা বলে।
এটিএসিএমএস নিয়ে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত ছিল, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেনীয় বাহিনী, যেখানে কিয়েভ গত অগাস্টে আকস্মিক আক্রমণ শুরু করে।
বাইডেন প্রশাসন কার্যত ইউক্রেইনকে বলছে যে ভবিষ্যতে যে কোনো সম্ভাব্য আলোচনার জন্য একটি শক্তিশালী দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে বর্তমানে দখল করা রাশিয়ার ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র অংশটিই কাজে দেবে। কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনিয়ান সিকিউরিটি অ্যান্ড কো–অপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সেরহি কুজান বিবিসিকে বলেন, জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন কিছু নয়–যা যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে; তবে আমি মনে করি, এটি আমাদের বাহিনীকে আরও সমকক্ষ করবে।
এটিএসিএমএস ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের নিশানায় আঘাত হানতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনে যুদ্ধ করার যে অনুমতি রাশিয়া দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন।
কুজান বলেন, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সরাতে রুশ ও কোরীয় সেনারা কয়েকদিনের মধ্যে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। ওই হামলার আগেই রোববার ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বাইডেন।
সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমের তৈরি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার অনুমতি দিলে পশ্চিমের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করা হবে, এই পদক্ষেপে সংঘাতের ধরন ও আওতা পাল্টে যেতে পারে। পুতিন বলেছেন, নতুন হুমকির ভিত্তিতে রাশিয়া ‘উপযুক্ত সিদ্ধান্ত’ নিতে বাধ্য হতে পারে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট দ্যুমার বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান লিওনিদ স্লুসস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস দিয়ে রাশিয়ায় আঘাত হানতে কিয়েভকে দেওয়া ওয়াশিংটনের অনুমতি কঠোরতম প্রতিক্রিয়ার দিকে নিয়ে যাবে। রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানলে অনিবার্যভাবে সংঘাতের গুরুতর বৃদ্ধি ঘটবে আর তা আরও গুরুতর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে পশ্চিমা দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে কিয়েভ হামলা চালালে তা যুদ্ধে নেটো সামরিক জোটের ‘সরাসরি অংশগ্রহণের’ শামিল হবে।
ট্রাম্প কী করবেন : যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদলের মাত্র দু’মাস আগে ইউক্রেইন যুদ্ধ নীতি পরিবর্তন করলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারের সময় থেকেই বলে এসেছেন ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করবেন তিনি। যদিও কীভাবে তা করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই তিনি বলেননি। আগামী জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে ট্রাম্প ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে করতে পারেন।
ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর বাইডেনের নীতি অপরিবর্তিত রাখবেন কিনা সে বিষয়ে এখনও কিছু বলেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কয়েকজন এরই মধ্যে বাইডেনের ইউক্রেন যুদ্ধ নীতি পরিবর্তনের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, আমার বাবা শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের জীবন বাঁচানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই সামরিক শিল্প সংশ্লিষ্টরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিতে চায়। নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সসহ অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাই বলেছেন, ইউক্রেনকে আর সামরিক সহায়তা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না।
ট্রাম্প কোন পথে যাবেন সেটি এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে ইউক্রেনীয়দের অনেকেই আশঙ্কা করছে যে, হবু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রসহ সার্বিক অস্ত্র সহায়তা কমিয়ে দিতে পারেন।