রায় শুনে আদালত থেকে পালালেন আসামি, আড়াই ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত দুই সদস্যের তদন্ত টিম গঠন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

সাজা ঘোষণা হয়েছে। আদেশ হয়েছে আসামিকে কারাগারে পাঠানোরও। কিন্তু সাজার রায় শুনে নিরাপত্তায় থাকা পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে এজলাস কক্ষের ডক থেকে কৌশলে পালালেন আসামি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রামের ১ম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ড. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামের আদালতে এই ঘটনা ঘটে। পরে বিকাল তিনটায় নগরীর বন্দর এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে নগর পুলিশের একটি টিম। ডক থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি হচ্ছেন বন্দর থানাধীন নিমতলা এলাকার বজলুল করিম খানের ছেলে মো. সাইফুল করিম খান। তিনি সাড়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি চেকের মামলার আসামি। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আলম মুজিবুল বশর নামের একজন ব্যবসায়ী সাইফুল খানের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টের (নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট) ১৩৮ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে পুলিশ হেফাজত থেকে পালানোর ঘটনায় আসামি মো. সাইফুল করিম খানের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় দন্ডবিধির ধারা অনুযায়ী একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের মহানগর হাজতখানার পরিদর্শক মো. রফিক উল্ল্যাহ মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আজকে (গতকাল) মামলাটির ধার্য তারিখ ছিল। যথারীতি আসামি সাইফুল আইনজীবীর মাধ্যমে এজলাস কক্ষের ডকে হাজির ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও চেকের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি ডকেই ছিলেন। নিরাপত্তা ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল মো. কবির উদ্দিন সরকার। অপর একটি মামলার অন্য একজন আসামিকে তিনি আদালতের বারান্দা থেকে ডাকতে গেলে ডকে থাকা আসামি সাইফুল খান কোনো এক সময় সবার অগোচরে কৌশলে পালিয়ে যান। আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আসামির আইনজীবীর কাছ থেকেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে এজাহারে আরো বলা হয়, আসামি সাইফুল খান এজলাস কক্ষে মোতায়েন থাকা পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে দণ্ডবিধির ২২৪ ধারা অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।

এদিকে এজলাস কক্ষের নিরাপত্তা ডিউটিতে থাকা কনস্টেবল মো. কবির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নগর পুলিশ। তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিমে প্রধান করা হয়েছে এডিসি প্রসিকিউশনকে (নিশান চাকমা)

ডিসি প্রসিকিউশন হুমায়ুন কবির আজাদীকে বলেন, আসামি পালানোর পর পর অভিযান পরিচালনা করে বন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাড়ে ১২ টার দিকে তিনি পালিয়েছেন। আমরা তাকে তিনটায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। দায়িত্বরত কনস্টেবলের বিষয়ে ডিসি বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে গাফিলতি ছিল কী না বা ঠিক কিভাবে আসামি এজলাস কক্ষের ডক থেকে আসামি পালালো তার সবকিছু তদন্তের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তখন দুপুর সম্ভবত সাড়ে ১২ টার সময় জানিয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার তারিখ থাকায় আসামি হাজির ছিলেন। আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও চেকের সমপরিমাণ অর্থদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে শুনি আসামি পালিয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যই এসে সেটি জানান। এরপর আদালত পালিয়ে যাওয়া আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরে জানতে পেরেছি, পুলিশ বিকাল তিনটায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আদালতের পক্ষ থেকে কনস্টেবল মো. কবির উদ্দিন সরকারকে শোকজ করা হয়েছে উল্লেখ করে বেঞ্চ সহকারী বলেন, কিভাবে হেফাজত থেকে আসামি পালালো সে বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পদে পুনরায় নিয়োগ পেলেন বিপ্লব বড়ুয়া
পরবর্তী নিবন্ধপ্রি-পেইড মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ