রামুতে সহোদর দুই শিশু হত্যা : ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

৪ জনের যাবজ্জীবন

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সহোদর দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিন নারীসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল২ এর বিচারক ওসমান গণি এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মীর মোশারফ হোসেন টিটু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, গর্জনিয়া বড়বিল এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, আবদু শুক্কুর, আলমগীর হোসেন প্রকাশ বুলু, মিজানুর রহমান ও মো. শহীদুল্লাহ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই এলাকার আবদুল মজিদ বদাইয়া, ফাতেমা খাতুন, রাশেদা খাতুন ও লায়লা বেগম।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি বিকালে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার দোকান কর্মচারী মো. ফোরকানের দুই পুত্র হাসান শাকিল (১০) ও হোসেন কাজলকে () পাখির ছানা দেয়ার লোভ দেখিয়ে একই এলাকার আবদু শুক্কুরের পুত্র জাহাঙ্গীর আলমসহ একটি চক্র অপহরণ করে। হাসান বাইশাঁরী শাহনূর উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা এবং হোসাইন বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। অপহরণের পর ওই দিন রাতে মুঠোফোনের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র। এরপর পুলিশ ও স্থানীয়রা মিলে স্থানীয় পাহাড়ি এলাকাসহ অপহরণকারীদের আস্তানায় তল্লাশি চালায়। তল্লাশির এক পর্যায়ে অপহরণের দুই দিন পর ১৯ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে একটি ফলের বাগান সংলগ্ন খালের পাড়ে নাকেমুখে রক্তাক্ত অবস্থায় অপহৃত দুই শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরদিন নিহত শিশুদের পিতা মো. ফোরকান বাদি হয়ে রামু থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই নয়জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেনমুক্তিপণ না দিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শিশুকে হত্যা করা হয়। পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ প্রথমে ড্রামে ভরে রাখা হয়। পরে সুযোগ বুঝে স্থানীয় খালের পাড়ে ফেল দেয় আসামিরা। তিনি আরো স্বীকার করেন, তিনি ও তার পিতা আবদু শুক্কুরের নেতৃত্বে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং তার আরো কয়েকজন সহযোগী ছিল।

আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, নয় বছর ধরে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলে। এই সময় সাক্ষীপ্রমাণসহ পারিপ্বার্শিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তাই আদালত আইনের বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া তাদেরকে বিভিন্ন অংকের অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাদিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।

রায় ঘোষণাকালে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্যরা সবাই পলাতক রয়েছেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মোকারমা সুলতানা পুতু নামে এক তরুণীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

নিহত শিশুদের পিতা মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, আমি রায়ে সন্তুষ্ট, তবে রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আশান্বিত হতে পারছি না। এছাড়া আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পলাতক আসামিরা গ্রেফতার না হলে তারা আমাকে হত্যাসহ নানাভাবে ক্ষতি করতে পারে। তাই পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের আহ্বান জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৯ বছর পর স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
পরবর্তী নিবন্ধচবির প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ককে বরখাস্ত