রাবিপ্রবিতে দরপত্র ছাড়াই ‘নিয়মবহির্ভূত’ কেনাকাটা

চেয়ার-টেবিল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শুক্রবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের পর নিয়মবহির্ভূতভাবে চেয়ারটেবিলসহ আসবাবপত্র ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মানুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসবাবপত্র ক্রয়ের কথা থাকলেও তার কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকার মধ্যেই তড়িঘড়ি করে আসবাবপত্র কেনার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলা শহরের রিজার্ভবাজারে অবস্থিত ‘মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্স’ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবাবপত্র সরবরাহ করে। সরবারহকৃত আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে এক্সিকিউটিভ টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও ফাইল ক্যাবিনেট। এর মধ্যে দুইটি মডেলের পাঁচটি এক্সিকিউটিভ টেবিল (কাস্টমাইজড), আটটি এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও ১১টি ফাইল ক্যাবিনেট রয়েছে। মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্সের দেওয়া ডেলিভারি চালানের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

বি. আলম ট্রেডার্সের সরবরাহকৃত রিগ্যাল ফার্নিচার ব্র্যান্ডের মোট ২৪টি আসবাবপত্রের আনুমানিক বাজার মূল্য যাচাই করে দেখা গেছে ভ্যাটট্যাঙ ছাড়াই ৬ লাখ ২৮০ টাকা। নির্দিষ্ট মডেলের বাজারমূল্য অনুযায়ী আরএফএলের রিগ্যাল ফার্নিচার ব্র্যান্ডের চারটি টেবিলের প্রতিটি টেবিলের মূল্য ৪৮ হাজার ৭৫০ টাকা, অন্য আরেকটি মডেলের মূল্য ৫০ হাজার ৬০০ টাকা, চেয়ার ১৪ হাজার ২৫০ টাকা এবং প্রতিটি ফাইল ক্যাবিনেটের মূল্য ২১ হাজার ৮৮০ টাকা। দরপত্র আহ্বান ছাড়া আসবাবপত্র ক্রয় করায় এটি মোট কত টাকার প্রকল্প হতে পারে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে তথ্য দেয়নি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বি. আলম ট্রেডার্স ও রাবিপ্রবির সংশ্লিষ্ট বিভাগও।

রাবিপ্রবি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত প্রক্রিয়া দুইভাবে হয়ে থাকে। এরমধ্যে প্রথমত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগের কাছ থেকে চাহিদাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায় ক্রয় বিভাগ (প্রকিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্ট)। আবার জরুরি প্রয়োজনেও ক্রয় করা হয়ে থাকে। তবে দুই প্রক্রিয়াতেই চাহিদারভিত্তিতে ক্রয় বিভাগ পরিকল্পনা বিভাগে প্রস্তাব পাঠায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র আহ্বানে সর্বনিম্ন দরে দরপত্র জমা দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। যদিও সেপ্টেম্বরের আসবাবপত্রে ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে, গত ১৮ আগস্ট রাবিপ্রবির উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার ও উপউপাচার্য (প্রোভিসি) প্রফেসর ড. কাঞ্চন চাকমার পদত্যাগ করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পদত্যাগের পর রাবিপ্রবি কার্যত প্রশাসন শূন্য রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমও। এর মধ্যেই ‘নিয়মবহির্ভূত’ভাবে ক্রয় করা হয়েছে চেয়ারটেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ক্রয় কর্মকর্তা (প্রকিউরমেন্ট অফিসার) বিভাস চাকমা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর কিছু আসবাবপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এই মালামাল কারা এনেছে কিংবা কিভাবে এনেছে এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রসিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্টকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। তবে জেনেছি আগের ভিসি ম্যাডাম থাকতে তিনি মৌখিকভাবে বি. আলমকে অর্ডার দিয়েছেন।

মেসার্স বি. আলম ট্রেডার্সের ম্যানেজার মো. শরীফ বলেন, রাবিপ্রবিতে কত টাকার মালামাল গিয়েছে এটা আমি সঠিক জানি না। আমি তো দোকানে বসি, অফিস ডিলগুলো আমাদের সিনিয়র ম্যানেজার জয়নাল ভাই দেখেন।’ যদিও পরে এ বিষয়টি জানতে বি. আলম ট্রেডার্সের সিনিয়র ম্যানেজার জয়নাল আবেদীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে, সদ্যপদত্যাগ করা রাবিপ্রবির প্রোভিসি ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, ‘দরপত্র আহ্বান হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এটা তৎকালীন ভিসি, পরিকল্পনা বিভাগের গফুর সাহেব জানতে পারবেন। আমাকে টেন্ডার কমিটিতেও রাখা হয়নি।

রাবিপ্রবির দরপত্র কমিটির সদস্য ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙামাটি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আলো জ্যোতি চাকমা বলেন, জুলাই ও আগস্টে আসবাবপত্র ক্রয় সংক্রান্ত কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্র আহ্বান করা হলে তো কমিটির সদস্য হিসেবে আমাকে জানানোর কথা। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

আসবাবপত্র কেনাকাটায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কিনাএ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল গফুর বলেন, আমাদের তৎকালীন ভিসি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বি. আলম ট্রেডার্সের লোকজনদের ডেকে কাস্টমাইজড আসবাবপত্রের অর্ডার দিয়েছেন। এই আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য বরাদ্দও আনা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেছেন, যে কারণে তিনি দায়িত্বে না থাকলেও অর্ডার করা আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। ভিসির তো আর এসব আসবাবপত্র বাসায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, এগুলা বিশ্ববিদ্যালয়েই থাকবে। আর আপনাকে এখানকার যারা এসব বিষয় বুঝিয়েছে, আপনি তাদেরকেসহ আমার অফিসে আসবেন। আপনাদেরকে বিষয়টি আমি আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দেব।

তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাবিপ্রবির সদ্যপদত্যাগ করা ভিসি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতারকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসপাতালে ভর্তির ৭ ঘণ্টা পর ডেঙ্গু আক্রান্ত কিশোরের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপিতাকে খুনের পর বিদেশ পালাতে গিয়ে দুইপুত্র গ্রেপ্তার