১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে তৃতীয় বারের সদস্য হিসাবে কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় বৃটেন সফর করেছিলাম। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান আহরণের জন্য আমরা বিভিন্ন ১৪ টি দেশের একটি গ্রুপ হিসাবে কমনওয়েলথের অর্থায়নে বৃটিশ পার্লামেন্টে আইন প্রণয়নের উপর আমরা প্রায় ৪ সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমাদের বিষয় ছিল চৎধপঃরপব ধহফ চৎড়পবফঁৎব ড়ভ চধৎষরধসবহঃ. বাংলাদেশ থেকে আমিই একমাত্র প্রতিনিধি ছিলাম। প্রথমদিন আমাদের প্রতিনিধি দলকে ১০ ডাইনিং স্ট্রিটে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী হিসাবে খ্যাত মার্গারেট থেচার সংবর্ধনা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বৃটেনের কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনেরও সভাপতি।
আমাদেরকে বৃটিশ পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন, হাউজ অব লর্ড এবং হাউজ অব কমন্সভার কার্য-পরিধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধিবেশন চলাকালীন এবং অধিবেশনের বাইরে বিভিন্ন অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানদের সাথে মতবিনিময়সহ প্রশ্নোত্তর পর্ব ও নানা দিক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা হত। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চিরকুমার এডওয়ার্ড হীথ সলিশবারী তার নিজের শহরে সংবর্ধনাসহ তার বাড়িতেও নিয়ে যান। মার্চ মাসের শেষের দিকে কমনওয়েলথ ডে পালন করা হচ্ছিল। মহামান্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধান হিসাবে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন। লন্ডনের মার্লবরো হাউজে ঐ সংবর্ধনায় বৃটেনের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বিভিন্ন অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময়কালে অন্যান্যদের মধ্যে আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। যখন তিনি জানতে পারেন আমি সংসদ সদস্য ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর মেয়র তখন তিনি চট্টগ্রামে ১৯৫৯ সালে তার ভরা যৌবনকালে তার স্বামী রাজা ফিলিপসহ চট্টগ্রামে ভ্রমণ ও দুই রাত্রিযাপন করেছিলেন বিদায়বেলায় তার স্মৃতিতে তৎকালীন চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের নাগরিক সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমার সাথে তার স্মৃতির রোমান্থন করেন। চট্টগ্রাম শহরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য তার স্মৃতিতে ভেসে আসে এবং সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত এই নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষণের জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রামের পুরানো সার্কিট হাউজের স্থাপত্যেও বিষয়েও তিনি তার স্মৃতি হতে স্মৃতিচারণ ও প্রশংসা করেন। সে আমলের চট্টগ্রামের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এবং নাগরিক সংবর্ধনা তিনি তার স্মৃতির ভেসে থাকা বিভিন্ন বিষয়ে আমার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। আমার সাথে রানীর হেন্ডশেকের ফটোসহ তৎকালীন জবধফবৎং উরমবংঃ ম্যাগাজিনে কভার পৃষ্ঠায় ছবিসহ ছাপানো হয়েছিল। সর্বজন এবং শ্রদ্ধেয় এই মহান ব্যক্তিত্ব ৯৬ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সেদিনের সেই আলাপ ও প্রাচ্যের রানী চট্টগ্রামের বিষয়ে মনোমুগ্ধকর বক্তব্য শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
লেখক : সাবেক মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন












