প্রাচীনকালে যারা চিঠি আদান–প্রদান করতেন তাদের বলা হতো রানার। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চিঠি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র পৌঁছে দিতেন। কাজের সুবিধার জন্য রানাররা হাতে একটি বল্লম এবং কাঁধে একটি ব্যাগ রাখতেন। বল্লমের মাথায় বাঁধা ঘণ্টা বাজিয়ে তারা পথচারীদের সতর্ক করতেন এবং নিজেদের আগমন জানিয়ে দিতেন। রানারদের ব্যবহৃত পুরনো দিনের সেই বল্লম বর্তমান প্রজন্মের অনেকের অদেখা। অনেকে হয়তো নামও শোনেননি।
এবার রানারদের ব্যবহৃত সেই বল্লম প্রদর্শন করা হয়েছে ‘স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শনী ও বিপণন–২০২৫’–এ। এছাড়া পুরনো দিনের ব্যবহৃত হারিকেন, স্বর্ণ বা অর্থ রাখার চামড়ার ক্যাশ ব্যাগ, পুরাতন ডাক মোহর, ছুরি, কাচি, লোহার নিক্তি ও বাটখারা প্রদর্শনীতে ছিল। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে টিকেট ক্যান্সেলিং মেশিন, ট্রেজারিতে ব্যবহৃত ৩টি একনলা বন্দুক, পোস্ট বক্স ও লেটার বক্স, ঘড়ি, ব্রিটিশ আমলের সাইনবোর্ড, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডাক কর্মচারীদের স্মারক, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথাসহ ডাকবিভাগের এরোগ্রাম, স্মারক খাম, উদ্বোধনী স্মারক, পোস্টকার্ড, পোস্টকোড ও বিভিন্ন ফরম।
চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চল পোস্টমাস্টার জেনারেলের নির্দেশনায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও) প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী স্মারক ডাকটিকিট প্রর্দশনী ও বিপণনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন ও চিটাগাং কালেক্টরস ক্লাব কর্তৃক একটি স্মারক খাম উন্মোচন করেন পূর্বাঞ্চল সার্কেলের (চট্টগ্রাম) অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল ড. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ডাক জীবন বীমার রিজিওনাল ম্যানেজার মোহাম্মদ তৈয়ব আলী ও চট্টগ্রাম বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল শরীফ মো. সাইফুল্লাহ। জিপিও চট্টগ্রামের প্রশাসন শাখার কর্মকর্তা তিলক চৌধুরীর সঞ্চালনায় জিপিও চট্টগ্রামের সিনিয়র পোস্টমাস্টার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রদর্শনীর শুরুতে স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শনী ও বিপণন আয়োজক কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাগত বক্তব্য দেন। বক্তব্য দেন চিটাগাং কালেক্টরস ক্লাবের সভাপতি প্রবাল দে। এ সময় প্রধান অতিথি চিটাগাং কালেক্টরস ক্লাবের সদস্যবৃন্দকে সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
প্রদর্শনীতে চট্টগ্রাম ডাক বিভাগের ফিলাটেলিক ও পোস্টাল মিউজিয়ামের সংগ্রহসমূহ এবং চিটাগাং কালেক্টরস ক্লাবের মূল্যবান সংগ্রহসমূহ প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীতে ডাক ব্যবস্থা, বিভিন্ন খাম ও স্মারক ডাকটিকিট প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীর আয়োজন উপলক্ষে ২৮ মে ৩০ সদস্যের প্রদর্শনী আয়োজন কমিটি করা হয়। প্রদর্শনীতে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত হয়ে স্মারক ডাকটিকিট ও খাম সংগ্রহ করেন।
বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চলে এ প্রদর্শনী। এ সময় বিভিন্ন শেণি–পেশার মানুষকে আসতে দেখা গেছে। প্রদর্শনী দেখতে আসা ফরিদা নামে একজন বলেন, আমরা এখন প্রযুক্তির যুগের মানুষ। কিন্তু একসময় যোগাযোগ হতো চিঠির মাধ্যমে। চিঠির যুগের সাথে আমরা পরিচিত না। অনেক কিছুই দেখিনি বা জানি না। এখানে এসে অনেক কিছু দেখলাম, জানলাম।
জিপিও চট্টগ্রামের প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা গত বছর এ রকম প্রদর্শনী করেছিলাম। এ বছরও করলাম। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। সিজেএস স্কুল, ফ্রোবেল একাডেমি, সহজপাঠ, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক–শিক্ষার্থী আমাদের এ আয়োজনে অংশ নিয়েছে। চিঠির যুগ শেষ হয়ে গেলেও চিঠির প্রতি মানুষের একটা আবেগ রয়ে গেছে। আধুনিক যুগে বার্তার স্থায়িত্ব কম, মুছে যায়; কিন্তু চিঠি যুগ যুগ ধরে রয়ে যায়।