অবশেষে ‘রাধে, ইউর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই’ দেখলাম। আমার ঈদুল ফিতর পরিপূর্ণ হলো। গত এক দশকে সালমান খান ভাইয়ের সিনেমা ছাড়া বাংলাদেশ ও বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইদ হয় না।
যাই হোক―ডিরেক্টর প্রভু দেবাকে কিছু মোবারকবাদ দেওয়া যায়। অনেক স্টাইলাইজড ও ম্যাসি একটা সিনেমা বানিয়েছেন তিনি। ‘দাবাং-৩’-এর পর এতটা আশা করিনি। একইসঙ্গে সেক্সিজম, স্লো হিউমার, অনর্থক দুই-তিনটা গান, আর ভাইয়ের উদ্ভট কিছু ম্যানারিজম―প্রভু দেবা আমাকে বরদাশত করতে বাধ্য করছেন।
এর মধ্যে একটা গানে নায়িকাকে কোলে নিয়ে ভাইয়ের জিম বা নাচানাচি করা, আর ক্লাইম্যাক্সে একইভাবে ভিলেনকে পেছনে ছুড়ে মারা―আমি বরদাশত করতে পারিনি। অনেক কার্টুনিশ লেগেছে এগুলা। এই স্মৃতি হয়তো কোনোদিন ভুলতে পারব না।
দেখতে পাচ্ছি―রাধে রিলিজের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটিকে ‘গাধে’ বলা হচ্ছে। এটা অবশ্য বাড়াবাড়ি। গত এক দশকে খানদের সিনেমা রিলিজ হলেই ভারতে নেগেটিভ প্রচারণা শুরু হয়। গাধে বলাও সেই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অংশ। কেউ বুঝে ও কেউ না বুঝে এসব করছেন।
রাধে যেহেতু পুলিশগিরির সিনেমা, তুলনা হিসেবে বলা যায়―এটা রনবীর সিংহের ‘সিম্বা’ থেকে লজিক্যাল। অন্তত নায়িকা ও তার সখীদের কথায় হিরো ক্রসফায়ারের সিদ্ধান্ত নেয় না। বিজয় মৌরিয়া ও এ সি মুগিল রাধের স্ক্রিনপ্লে ও সংলাপ লিখেছেন। গল্পটা যেহেতু রিমেক এবং নতুন কিছু নেই―তাই অস্বীকার করার উপায় নেই, তারা নির্মেদ ও ভাল কাজ করেছেন। পুরনো সংলাপগুলা ঠিক জায়গায় ফিট করেছেন। বিজিএমও যথার্থ বলা যায়।
অবশ্য এতকিছুর পরেও রাধে একবারই দেখা যায়। ভাইয়ের জন্য হলে বড়জোর দুইবার। কিন্তু তৃতীয়বার কিছুতেই নয়।
যেহেতু সারে জাঁহা সে আচ্ছা ওয়ান্টেডের (২০০৯) সিক্যুয়েল, বলা যায়―রাধের ভেতর বিনোদ খান্না, মহেশ মাঞ্জেকার কিংবা প্রকাশ রাজের মত অভিনেতাদের পারফরম্যান্স নেই। নেই পারিবারিক ইমোশনও। ইটস অল অ্যাবাউট ভাই, ভিলেন অ্যান্ড ড্রাগস। রণদীপ হুদা ভিলেন চরিত্রে ভাল করেছেন। আই উইশ, ওয়াকিং সিনগুলা বাদ দিয়ে তিনি যদি আরেকটু ভাল করার স্কোপ পেতেন। যেটা প্রকাশ রাজ ওয়ান্টেডের ক্লাইম্যাক্সে পেয়েছিলেন। একইসঙ্গে ভাইয়ের চরিত্র যদি আরেকটু ইনটেন্স ও ক্রেজি হতো! অন্তত চুলগুলা যদি ভাইয়ের ঘেড়ি পর্যন্ত নামতো!
সত্যি বলতে এই সেই ভাই―যাকে আমি চাইনি। অবশ্য রাধে’র দুটো জিনিস আমার ভালো লেগেছে। একটা ভাইয়ের শার্ট খোলার সিন। মনে হয়েছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ভাই নিজেকে নিয়ে হিউমার করেছেন এইখানে। আগে ভিলেনদের মারার সময় শার্ট খুলতেন তিনি। এবার নায়িকাই শার্ট খুলে দিচ্ছেন। আরেকটা জিনিস হচ্ছে―তার চোখ (কি ভাবছেন, নীল ব্রেসলেটের কথা বলব?)। ভাইয়ের মুখে বয়সের ছাপ, চামড়া কুঁচকে যাচ্ছে কিন্তু চোখ? এখানেই তিনি এভারগ্রিন। তার দৃষ্টি স্বচ্ছ। ক্লান্তি স্পর্শ করেনি সেখানে। যেন, টসটসে সালমান খান।
আবার গত এক দশকে এ নিয়ে ভাইকে বেশ কবার কোরিয়ান সিনেমার দিকে হাত বাড়াতে দেখলাম। আই হোপ―এবার তিনি কিছুটা সফল হয়েছেন। পুরো সফল হতে হয়তো তাকে নায়িকা চরিত্র বাদ দিতে হবে। অবশ্য এর মানে এই নয় যে রাধেতে দিশা পাটানি ভাল করেননি। তার ড্যান্স স্কিল ভাল। অভিনয় অ্যাওয়ার্ড উইনিং না হলেও খারাপ নয়। আফটার অল, ভাইয়ের অনেক সমস্যার একটা হচ্ছে―তিনি যখন স্ক্রিনে থাকেন, অন্যদের দিকে চোখ যায় না। সেদিক থেকে দিশার ব্যাডলাক, তিনি ওয়ান্টেডের আয়েশা টাকিয়ার মতো গুরুত্ব পাননি।
লেখক : গল্পকার, গণমাধ্যমকর্মী