ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলা অংশে এলে যেন শিল্প মনের সত্ত্বাগুলো কবিতা হয়ে আকাশে উড়ে। পূর্বে উঁচু পাহাড় আর সড়কের মাঝে সারি সারি রাধাচূড়া, জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার দোলখাওয়া জাগিয়ে তোলে মন ও মনন। সুন্দরের পিপাষু মনগুলো রবীন্দ্র সংগীতের সুরই বেজে উঠে এখানটায়। কানে বাজে–আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলে, দোলাও দোলাও…।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিডইয়ানে লাগানো রাধাচূড়াগুলো মাথার উপরের ছায়া হয়ে উঠেছে। ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কমলদহ এলাকায় গাছগুলো উপরে উঠে দুপাশে ঢাল ছড়িয়ে ফুলের মঞ্জুরিতে সেজেছে বরণঢালার মতো। এছাড়া কোথাও সোনালু, কোথাও জারুলসহ নানান জাতের ফুল। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই যে কারও মনে প্রশান্তি আসে; সুবাসে মেতে ওঠে মন।
মহসড়কে চলাচলকারীরা এখন ফুলের সৌন্দর্যের মুগ্ধতা নিয়েই পাড়ি দিচ্ছেন গন্থব্যে। অপরূপ সৌন্দর্যের চাদরে ঘেরা দেশের লাইফলাইন খ্যাত ব্যস্ততম ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে নানা বৃক্ষরাজি ও ফুল। সড়ক বিভাজকে নানা প্রজাতির ফুল গাছে ফুটেছে রঙিন ফুল। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এর সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। যানবাহনের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তে নিমেষেই যে কারও মনে প্রশান্তি চলে আসে। বাতাসে ভেসে আসে সুবাস।
জানা গেছে, এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে বিপরীত লেনের গাড়ির ওপর না পরে সেজন্য ডিভাইডারের ওপর রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। ফলে মহাসড়কের কোথাও কোথাও দেখা যায় ফুলের বাগান। আবার কোথাও কোথাও সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। এসব ফুল গাছের মধ্যে রয়েছে হৈমন্তি, কুর্চি, টগর, রাধাচূড়া, কাঞ্চন, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশ, কবরী, ক্যাসিয়া ও জারুল।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেইট পর্যন্ত প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এর মধ্যে বেশি ফুলের দেখা মিলছে মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা ও ফেনী অংশে।
কলেজ শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায়ই ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করি। মহাসড়কের মাঝে মাঝে ফুলের বাগান দেখতে খুব ভালো লাগে। এমন সুন্দর ফুলের বাগানে দিন দিন মহাসড়কের আকর্ষণ বাড়ছে। সড়কের সৌন্দর্যে মুগ্ধ যাত্রীরা অনেক সময় গাড়ি থামিয়ে নেমে ফুল গাছের সঙ্গে ছবি তুলেন।
চৌধুরী বোরহান উদ্দিন নামে একজন বলেন, ডিভাইডারে অনেক রকমের ফুলের সমারোহ থাকায় অনেক সুন্দর লাগে। বাস কখনো জ্যামে আটকা পড়লে যাত্রীরা তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে বাসের জানালা দিয়ে ফুলের ছবি তুলতে দেখা যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, মহাসড়ক ডিভাইডারের মাঝখানে বিভিন্ন ফুলগাছ থাকে; তাই আমরাও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এবং যানবাহনে থাকা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের যাতে আনন্দ দেয় সেজন্য গাছ রোপণ করেছি।
হাইওয়ে পুলিশ রিজিয়ন (চট্টগ্রাম) অতিরিক্ত ডিআইজি খাইরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বাহারি ফুলের সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে। জারুল ফুল বাংলার চেরি ফুল হিসেবে বিবেচিত হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডিভাইডারে ফুলগাছগুলোর সৌন্দর্যে ভ্রমণকারীরা বিমোহিত।