চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রাতে চিকিৎসক না থাকা, পর্যাপ্ত ওষুধ না পাওয়া এবং রোগীর জন্য সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেবাগ্রহীতারা। গতকাল বুধবার দুপুরে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক সংগঠন সনাক–টিআইবি চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত গণশুনানিতে সেবাগ্রহীতারা বলেন, হাসপাতালে সবসময় পানি থাকে না। রোগীদের সেবায় সিটি স্ক্যান মেশিন ও এমআরআই মেশিন স্থাপন করা দরকার। হাসপাতালে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাব ছাড়াও আয়ারা ঠিকমতো কাজ করেন না। এছাড়া ভর্তি রোগীর সিটি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নানা অনিয়ম। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত নেবুলাইজার মেশিন নাই। এছাড়া জলাতঙ্ক টিকার ক্ষেত্রে বখশিসের নামে উৎকোচও আদায় করা হয়।
গণশুনানিতে সেবাগ্রহীতাদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, হাসপাতালে অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের ভালো সেবা দিতে চিকিৎসকরা তৎপর রয়েছেন। কাগজে কলমে ২৫০ শয্যার হলেও ১৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে হাসপাতালে সেবা দিতে নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে প্রায় দুইশতাধিক রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকে। ফলে আন্তরিকতা থাকার পরও অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। এছাড়াও বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ওয়াসা, গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বারবার ধর্ণা দিয়েও দ্রুত সহযোগিতা পাওয়া যায় না। রোগীদের যত্রতত্র ময়লা ফেলা এবং পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকা হাসপাতালের সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না। এজন্য রোগীদেরও সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিজের বাড়ির মত করে যত্নবান হতে হবে।
সনাক–টিআইবি চট্টগ্রামের সদস্য প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অজয় দাশ। গণশুনানিতে কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও সনাক–টিআইবির দেশব্যাপী চলমান দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন সনাক–টিআইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কে এম আশিক কামাল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সনাক চট্টগ্রামের সদস্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস, রওশন আরা চৌধুরী, এস এম ফরহাদ উল্লাহ, ডা. আবুল বাশার, ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ মো. ফয়েজ আহমদ, পরিসংখ্যানবিদ শওকত আল–আমীন চৌধুরী, সেবা তত্ত্বাবধায়ক রেশমী দাশ, সিনিয়র স্টাফ নার্স মনোয়ারা বেগম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অজয় দাশ বলেন, আমি মনে করি আজকের কর্মসূচি সার্থক হয়েছে। কারণ আমরা রোগীদের সাথে সরাসরি বসে তাদের সমস্যার কথা শুনেছি। ইতোমেধ্য অনেক সমাধানের পথও আমরা বের করছি। বাংলাদেশের খুব কম হাসপাতালেই আছে সেবার মান পর্যবেক্ষণে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিগত সময়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আউটসোর্সিংয়ের স্টাফ ক্লোজ করা হয়েছিল। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিশেষ করে ওয়ার্ডে কোথাও কাউকে আপনারা টাকা বা বখশিস দিবেন না। সনাক–টিআইবির সহযোগিতায় আমরা নিয়মিতভাবে রোগীদের কথা শুনছি এবং সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করছি। রোগীরা যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি সেবার মান উন্নয়নে নাগরিক সমাজ ও রোগীদের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সেবা গ্রহীতাদের প্রায় সবাই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তারদের সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। গণশুনানিতে শতাধিক সেবাগ্রহীতা উপস্থিত ছিলেন।