রাতে গাছ কেটে রাখা হয়, ট্রাক এসে নিয়ে যায় সকালে

হারবাং সংরক্ষিত বনাঞ্চল

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর একদল সশস্ত্র বনদস্যু নির্বিঘ্নে দিনের বেলায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। ভোরের আলো ফোটার আগেই এসব বনদস্যু বনের ভেতর বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ নিধনের পর তা স্তূপাকার করে রেখে দেয়। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত বাড়ার সাথে সাথে অসংখ্য ট্রাক, পিকআপ ও জিপের (চাঁদের গাড়ি) লাইন পড়ে যায় সংরক্ষিত বন থেকে নিধনকৃত গাছ অন্যত্র পাচারের জন্য। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই কাঠ চোরাকারবারি বনদস্যু সিন্ডিকেটের এমন তৎপরতা অব্যাহতভাবে চললেও রহস্যজনকভাবে বনবিভাগ অনেকটা নীরব ভূমিকায়। এতে কাঠ চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে ওঠেছে হারবাং বনবিটের নিয়ন্ত্রণাধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

অভিযোগ রয়েছে, সংরক্ষিত বনের গাছ, পাহাড় ও বালুদস্যু চক্রের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়ে বনবিভাগ ম্যানেজড হয়ে গেছে। এতে ব্যাপকভাবে পরিবেশবিধ্বংসী তৎপরতা অব্যাহতভাবে চলছে হারবাং বনবিটে। আবার অবৈধভাবে বনভূমি দখলে নিয়ে সেখানে চলছে বসতবাড়ি নির্মাণের কাজও।

স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকজনের ভাষ্যবনবিভাগ, স্থানীয় দালাল, কাঠ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের বহুপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার হারবাং বনবিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে। এ সময় বনবিভাগের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধাই দেওয়া হচ্ছে না। কারণ মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে যাওয়ায় নির্বিঘ্নে এসব অপকর্ম চলমান রয়েছে হারবাংয়ে।

চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এম আর মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জাধীন হারবাং বনবিটের আওতাভুক্ত সংরক্ষিত বন এলাকায় বনবিভাগের রোপিত ও প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত সেগুন, চাপালিশ এবং সামাজিক বনায়নের গামারী, কড়ই, গর্জন, আকাশমনি, জামগাছসহ নানা প্রজাতির ছোটবড় গাছ কেটে সরকারি বাগান সংলগ্ন নিরাপদ জায়গায় স্তূপ করে রাখে। এরপর সন্ধ্যা থেকে রাত বাড়ার সাথেই নিধনকৃত এসব কাঠ বিভিন্ন গাড়িভর্তি করে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে রাতভর পাচার করে বিভিন্ন ইটভাটা ও স’মিলে। মিজানুর রহমান, রশিদ আহমদসহ কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশন (টিপি) থাকার পরও চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বনবিট এলাকা দিয়ে গাছ নিয়ে আসতে হলে হারবাং বনবিট কর্মকর্তার নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ারকে নির্ধারিত হারে গাড়ি প্রতি চাঁদা দিতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কাঠ ব্যবসায়ী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বনবিভাগ ও তাদের দালালদের চাঁদা দেওবার বিষয়টি অনেক পুরোনো। যারা বৈধ পন্থায় কাঠ নিয়ে আসছেন, তারা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আবার যারা অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ পাচার করছেন তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এর বিপরীত হলেই সড়কেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে কাঠবোঝাই গাড়িগুলোকে। জমির উদ্দিন নামের একজন ট্রাক চালক বলেন, বৈধ কাঠবাহী গাড়ি হারবাং বনবিট এলাকা অতিক্রম করার সময় উক্ত স্টেশনে কাঠের ক্যাটাগরি অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। ব্যতিক্রম হলে হারবাং বনবিটের নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের হামলার শিকারও হতে হয়।

অভিযোগের বিষয়ে চুনতি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্নজনের কাছ থেকে এসব অভিযোগ আমারও কানে আসার পর বিট কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হারবাং বনবিট নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বনবিট কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েট ছাত্রলীগের ১৮ নেতাকে হল থেকে বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধদেবতাকুমের পথে পথে রহস্যের হাতছানি