ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলা চলছে এখন। গতকাল ছিল মোহামেডানের ম্যাচ। মুশফিক খেলছেন মোহামেডানের হয়ে। ওয়ার্ম–আপ সেশনের জন্য দলের অন্য অনেকের আগেই মাঠে নেমে গেলেন মুশফিকুর রহিম। তবে কিছুক্ষণ পর বদলে গেল চিত্র। ম্যাচ শুরুর আগে সবাই মাঠে ঢুকে গেলেন। কিন্তু সীমানার বাইরে অপেক্ষায় রাখা হলো মুশফিককে। পরমুহূর্তেই পরিষ্কার হয়ে গেল সবকিছু। দুই সারিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটাররা। তাদের ‘মাঝ দিয়ে মাঠে প্রবেশ করলেন সদ্য ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো অভিজ্ঞ উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের নায়ক মাঠ থেকে বিদায় বলতে পারেননি। তবে অবসরের ঘোষণা দিয়ে পরদিন সকালে ‘গার্ড অব অনার’ পেলেন তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার উজ্জ্বল উদাহরণ মুশফিক। এক সংস্করণকে বিদায় জানানোর পরও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিন সকালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে মাঠে আসেন এই ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে লড়াই মোহামেডানের। টসের সময় দীর্ঘদিনের সতীর্থকে প্রশংসায় ভাসান মোহামেডান অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দারুণ একজন দূত মুশফিকুর রহিম। তার অর্জন অতুলনীয়। অনেক বছর এসব মনে রাখা হবে। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় ক্রিকেটার এসেছে। তবে কেউ যদি কাউকে আদর্শ হিসেবে নিতে চাই, সেটি অবশ্যই মুশফিকুর রহিম। ২০২২ সালের এশিয়া কাপের পর সামাজিক মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিক। আড়াই বছর পর এবার ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার ধরনটাও অভিন্ন। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিই তাই হয়ে রইল মুশফিকের ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যাট হাতে দুই ম্যাচেই ব্যর্থতার পর চারিদিক থেকে সমালোচনার তীর ধেয়ে যাচ্ছিল মুশফিকের দিকে। এসব আলোচনার মাঝেই দেশে ফিরে কঠিন সিদ্ধান্তটি জানিয়েছেন তিনি। টি–টোয়েন্টির মতো ওয়ানডে থেকেও তাই মাঠ থেকে বিদায় নেওয়া হলো না তার। নয়তো জাতীয় দলের সতীর্থদের কাছ থেকেই হয়তো বিদায়ী ‘গার্ড অব অনার’ পেতে পারতেন মুশফিক। সেটি না হলেও অবসর নেওয়ার পর দিনই মুশফিককে সম্মান জানালেন মোহামেডানের সতীর্থরা।
এই তালিকায়ও অবশ্য ছিলেন মুশফিকের জাতীয় দলের সতীর্থদের অনেকে। অধিনায়ক তামিম ছাড়াও মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, তাওহিদ হৃদয়, ইবাদত হোসেন চৌধুরী, তাওহিদ হৃদয়, রনি তালুকদার, আবু হায়দারদের কাছ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ পান অভিজ্ঞ কিপার–ব্যাটসম্যান। পরে মাঠে নেমে পুরো পঞ্চাশ ওভার কিপিং করেন মুশফিক। বরাবরের মতোই মাঠে তিনি ছিলেন দারুণ সক্রিয়। শুরু থেকেই নানা পরামর্শ দিতে থাকেন বোলারদের। মাঠ সাজানোতেও সাহায্য করেন তামিমকে। রূপগঞ্জ টাইগার্সের চতুর্থ উইকেট পড়ার পর স্টাম্প মাইকে কোনো এক সতীর্থের সঙ্গে খুনসুঁটি করতেও শোনা যায় তাকে। মজার ছলে আরও কিছু রান করতে দিয়ে তিনি বলেন, ‘রান করতে দে, নাহলে পরে কিন্তু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাবি না।’ হাসি–মজার মাঝেও নিজের কাজটা ঠিকঠাকই করেন মুশফিক। দুইটি স্টাম্পিংয়ের পাশাপাশি একটি ক্যাচ নিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তিনটি ডিসমিসাল হলেই তিনশ পূর্ণ হয়ে যেত তার। সেই পথ বন্ধ হয়ে গেলেও পরদিন মাঠে নেমে ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে তিনটিই ডিসমিসাল পেলেন অভিজ্ঞ কিপার।