এটি সর্বজনবিদিত যে, যেকোন জাতিরাষ্ট্র–জনপ্রিয় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রধান উপকরণ হচ্ছে মিথ্যা–বানোয়াট–প্রতারণা–কল্পনাপ্রসূত দুরভিসন্ধিমূলক মিথ্যাচার–গুজবসন্ত্রাস। কোন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ–বিদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে হলুদ সাংবাদিকতা–কথিত এনজিও এবং আন্তর্জাতিক কদর্য চক্রান্তকারীদের যোগসাজশে সামাজিকযোগাযোগ–ফেইসবুক–অন্যান্য অপাংক্তেয়–অস্বীকৃত গণমাধ্যমের আশ্রয়ে কল্পকাহিনী তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন দেশে অতীতে সংঘটিত লোমহর্ষক হত্যা–গণহত্যা–নির্যাতন–নিপীড়নের ছবিগুলোর অসৎ সংযোজনে মিথ্যার বেসাতিতে লিপ্ত কিছুসংখ্যক বেসরকারি সংগঠন বা ব্যক্তির বাণিজ্যিক উপার্জনে পরিণত। বাংলাদেশেও স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই অন্ধকারের পরাজিত শক্তির কূটকৌশলে কথিত কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ–মাছ ধরার জাল জড়ানো রমণীর দৃশ্য–ক্ষুধার আর্তনাদে জর্জরিত অন্যদেশের নিরীহ মানুষগুলোর বুভুক্ষু মুখগুলোকে এক করে কুৎসিত চিত্রকল্প তৈরি–প্রচারণা সম্পর্কে বিশ্ববাসী সম্যক অবগত আছেন। কীভাবে লুম্পেন অপসংস্কৃতির মোড়কে বিশ্বের পরাশক্তির অনুচররা রাষ্ট্র–সরকারের এগিয়ে যাওয়ার পথে নানা অন্তরায়–প্রতিবন্ধকতার দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করে; তার তিক্ত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জনগণের রয়েছে।
অতীতের এসব বিপথগামী অস্পৃশ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যেভাবে ষড়যন্ত্রের নানামুখী বেড়াজাল তৈরি হয়েছিল পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত লালসবুজ পতাকার স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশের আপামর জনগণের ঐক্যবদ্ধতায় তার মূল উৎপাটন করে বর্তমান সরকারের অপরাজেয় অভূতপূর্ব উন্নয়ন গৌরবগাঁথায় শুধু বাংলাদেশ নয়; অবাক বিস্ময়ে পুরোবিশ্ব অবলোকন করছে। এই অগ্রগতির পদযাত্রায় প্রাথমিক পর্যায়ে একে রুদ্ধ করার যে অপকৌশল অবলম্বনের অপচেষ্টা করা হয়েছিল; বিডিআর বিদ্রোহ ও শাপলা চত্বরের ঘটনা অন্যতম। দিবালোকের মত সুস্পষ্ট এবং সত্য ঘটনাসমূহ কুচক্রী মহলের গভীর গাত্রদাহ থেকে সরকার উৎখাতের জন্য নিগূঢ় ষড়যন্ত্রের নীলনকশার বহির্প্রকাশ সর্বজনস্বীকৃত। অতিসম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানে মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সম্পাদক আদিলুর রহমান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের সম্মানিত বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।
ইতোমধ্যে উল্লেখ্য ঘটনা নিয়ে তথাকথিত ব্যক্তি–সংস্থা কর্তৃক অনাকাঙ্ক্ষিত–অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ বা বিবৃতি প্রদান কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাদের অনভিপ্রেত এই কর্মকান্ড মিথ্যাচারকে আরো অনুপ্রাণিত করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুঃখজনক হলেও সত্য ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে এক যৌথ প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার, আদিুলর রহমান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনের মুক্তি এবং সংগঠনটির নিবন্ধ ফের চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে অনুরোধ করা হয়। এছাড়াও ‘অধিকার’র ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে উল্লেখ্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পাওয়া শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকা উচিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। প্রাসঙ্গিকতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ঢালাও কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো।’ উল্লেখ্য যে, উভয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং ৪ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আদিলুর ও এলান শাপলা চত্বরে ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট–উদ্দেশ্যপ্রণোদিত–মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচারে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্নে অপচেষ্টা চালান যা আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে–বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে। পরবর্তীতে এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
সচেতন মহলসহ দেশের আপামর জনগণ সম্যক অবগত আছেন, মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতিকে উচুমাত্রিকতায় সমাসীন করে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তিরক্ষাসহ বিভিন্ন নীতির আলোকবর্তিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির উৎকর্ষতার মূলে রয়েছে তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব–কূটনৈতিক অভিজ্ঞান–বিশ্বনেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিবিড় সুসম্পর্ক–নানামুখী বৈশ্বিক সমস্যা ও সংকট উত্তরণে অনুপম ভূমিকা। সামগ্রিক বিষয়ে তাঁর দূরদর্শিতা–সুদূরপ্রসারী চিন্তা–চেতনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক–রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। বহু–দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক–উপ আঞ্চলিক সম্পর্কসহ সকল ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অধিকতর অত্যুজ্জ্বল করেছেন। নারী নেতৃত্ব–নারী উন্নয়ন–নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল ও সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের স্বীকৃতি শুধু নেত্রীকে নয়; প্রবোধিত আত্মপ্রত্যয় ও আত্মমর্যাদায় বাঙালি জাতি–রাষ্ট্রের অবস্থানকে বিশ্বপরিমন্ডলে সুমহান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। বলিষ্ঠচিত্তে নির্ভীক স্বাধীনসত্তায় আত্নপ্রত্যয়ী এ মহীয়সী নেত্রী তথাকথিত উন্নত বিশ্বের শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু ও অপপ্রচারণা এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল অশুভ চক্রান্ত–প্ররোচনাকে উপেক্ষা করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করতে সফল ও সার্থক হয়েছেন।
দেশীয়–আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতানুসারে, শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন; দল–মতের উর্ধ্বে উঠে তিনি রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। তাঁর অকুতোভয় সাহসী নেতৃত্ব–রাজনৈতিক প্রজ্ঞা–অভিজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বপরিমন্ডলে অনন্য মর্যাদার আসনে সমাসীন। অসাধারণ কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি এশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাথে ভারসাম্যমূলক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেশের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রেখে কূটনীতির বহু চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাংলাদেশের ভূ–রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে তাঁর কূটনৈতিক পরিপক্বতা উচুমার্গে প্রশংসিত। ভারত–চীন–জাপান–রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সাথে নিগূঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে তিনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য দেশ বা পক্ষের সঙ্গে বৈঠক–কথোপকথনে অসীম সাহসিকতায় তিনি দেশের ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করেন। বিশ্বব্যাপী তার সাহসী নেতৃত্বের অনবদ্য উদাহরণ হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং পদ্মাসেতু নির্মাণে মিথ্যা নাটকের অবসান ঘটিয়ে ‘আমরাও পারি’ ব্রতে নির্মিত পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান বাস্তবায়ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সুদৃঢ় মেধা–প্রজ্ঞার রসায়নে কূটনৈতিক তৎপরতায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের স্থলসীমানা চুক্তি ১৯৭৪ এর প্রটোকল স্বাক্ষর এবং ২০১৫ সালে স্থলসীমানা চুক্তির অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল–সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। ভারতের ১১১টি এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের বহুল প্রতিক্ষীত নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনবদ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আইনের শাসনের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশ–মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হয়। ঐতিহাসিক এই মীমাংসায় বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার লাভ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকার ফলে করোনা মহামারিকালে অতি দ্রুততর সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সংগ্রহসহ কার্যকর ব্যবস্থাপনায় করোনা বিজয়ী অভিধায় অভিষিক্ত হন।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতৃবৃন্দসহ বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নন্দিত হয়েছেন। বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘এই নারী একটি শক্তির নাম’ শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশও উল্লেখ করার মতো। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের বিগত এক দশকের অসামান্য অর্জনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক সভাপতি ডেভিড ম্যালপাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন,‘ পৃথিবীর অনেক দেশই দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে পারে।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘সব বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন।’
কিছু সংখ্যক অমূলক বিবৃতি–বক্তব্য সত্ত্বেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের বিচক্ষণ কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের সহিত সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার অব্যাহত রয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে যুক্তরাজ্য সফরকালে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন–নারীর ক্ষমতায়নে অর্জিত সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লাউস শোয়াবের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১৭–২০ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে সংস্থাটির ৪৭তম বার্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেন। ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত সরকার প্রধান এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হন যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার। ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করেছেন। অত্যন্ত ফলপ্রসূ জাপান সফরকালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপক অংশীদারিত্ব থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতিতে আগামীতে এ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার এবং ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসাবে আইনের শাসনের ভিত্তিতে অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার দৃঢ় আশাবাদ–অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অদম্য উন্নয়ন–অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্বসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিরাজমান। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরের সময় প্রথমবারের মতো চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক স্বর্ণালী যুগ অতিক্রম করছে। এছাড়াও বর্তমান সরকার এশীয় বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশীয় অঞ্চলে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসারে সার্ক, বিমসটেক, বাংলাদেশ–চীন–ভারত–মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম–ইসি), বাংলাদেশ–ভুটান–ভারত–নেপাল (বিবিআইএন) প্রভৃতি আঞ্চলিক/উপ–আঞ্চলিক জোট/ফোরামকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আওতায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কার্যসম্পাদন করে যাচ্ছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের অন্যতম ঢাকায় বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমসটেক) স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন নবতর অধ্যায় তৈরি করেছে। কোনো আঞ্চলিক সংস্থার প্রথম সদর দপ্তর বিমসটেক সচিবালয়ের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রতিভাত। সদ্য সমাপ্ত জি–২০ সম্মেলনের মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নেতৃত্বাধীন জৈব জ্বালানির বৈশ্বিক জোট ‘গ্লোবাল বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্স (জিবিএ) এর সদস্য হলো বাংলাদেশ। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের প্রস্তাবে এই জোটের সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোনো জোটের সদস্য হলো। যার শতভাগ সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
স্বল্প পরিসরে উল্লেখ্য অর্জনসমূহ বিবেচনায় এটি নির্দ্বিধায় দাবি করা যায় যে, মিথ্যার বেসাতি করে যারা দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাদের সকল কূট উদ্যোগ দিনশেষে খড়কুটোর মত উবে যাবে। সূর্যের আলো যেমন অন্ধকারকে ঢেকে অসত্যকে সংহার করে সত্য–সুন্দর–কল্যাণ–আনন্দের বার্তাকে জনসম্মুখে উদ্ভাসিত করে ঠিক তেমনি চলমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির পথে কোন বাধাই কার্যকর হওয়ার নয়। বাংলাদেশের অবারিত বিনিয়োগ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিপুল সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগ কার্যক্রম–শিল্পোন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি–সামাজিক নিরাপত্তাবলয়–অবকাঠামো উন্নয়নসহ সামগ্রিক অর্জন দৃশ্যমান। শত অপপ্রচার চালিয়েও দেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে কোন অশুভ কৌশল কোনভাবেই সফল হতে পারে না। কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই ‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়: জ্বলে পুড়ে–মরে ছারকার তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ সকল অবৈধ–অযৌক্তিক–বানোয়াট–প্রতারণামূলক অপপ্রচারকে পরাভূত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই– এই বিষয়ে দেশের সকল নাগরিকবৃন্দের সাথে সহমত পোষণ করছি।
লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়