রাজি হয়েও সিদ্ধান্ত বদল

পিবিআইয়ের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৮ মে, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

খোদ পুলিশের সাথেই যেন ‘চোর-পুলিশ’ খেলছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। এ অভিমত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। তারা জানিয়েছেন, বাবুল আক্তার এখন যা বলছেন, পরক্ষণে আবার উল্টে যাচ্ছেন। তদন্ত টিমের সদস্যদের বিভ্রান্ত করে চলেছেন তিনি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকারী টিম পিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিতে তিনি রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু আদালতে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করেন। তাদের দাবি, একইভাবে স্ত্রীকে ‘খুন করার কথা ঘুরিয়ে স্বীকার’ করছেন, কিন্তু আদালতে বলছেন, যা আমি করি নি, সে বিষয়ে ১৬৪ কেন করবো? অপরদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর তার বিশ্বস্ত সোর্স মুসাকে না চেনার ভান করলেও এখন স্বীকার করছেন মুসা তার সোর্স ছিল। এদিকে পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের পর মুসাই প্রথম বাবুল আক্তারকে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল আক্তার মুসার কাছ থেকে কোনো ধরনের ফোন পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। বরং তিনি জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তাকে প্রথম বাসার গৃহকর্মী ফোন করেছিলেন। তিনি ঘুমে থাকায় কল রিসিভ করতে পারেননি। এরপর ফোন করে ‘বাড়িওয়ালা’ বিষয়টি তাকে জানান। এভাবে বাবুল আক্তার শুরু থেকে ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মতো তাকে রিমান্ডে আনার চিন্তাভাবনা করছে বলে আজাদীকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা।
পিবিআই সূত্র জানায়, বাবুল আক্তার রিমান্ডে চতুর্থ দিন থেকে কিছু কিছু বিষয় স্বীকার করছিলেন। গতকাল বাবুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তাঁর স্ত্রীকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আবেদন করা হলো। পরে কিন্তু তিনি আর জবানবন্দি দেননি।
আদালত পাড়ায় নাটকীয়তা
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, বাবুল আক্তারকে নিয়ে গতকাল সোমবার আদালত এলাকায় কিছুটা নাটকীয়তাই হয়। তাকে সকালে আদালতে আনা হলেও তা গোপন রাখা হয়। পাঁচ দিন পিবিআই হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। যদিও গণমাধ্যমকর্মীরা খবর পেয়েছিলেন যে তাকে সাড়ে ১২টা-১টার দিকে আদালতে নেওয়া হতে পারে। সকালের ভাগে তাকে আদালতে হাজির করা, পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া, কোন বিচারকের আদালতে নেওয়া হবে- এসব বিষয়ে পিবিআই ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ছিলেন নিরুত্তর।
চার ঘন্টারও বেশি আদালতে অবস্থান এবং একজন বিচারকের খাস কামরায় বেশ কিছুক্ষণ থাকলেও এই হত্যাকাণ্ডের বাদী থেকে আসামিতে পরিণত হওয়া বাবুল আক্তার জবানবন্দি দেননি, যাকে পুলিশ বলছে ‘শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত বদল’।
কিন্তু জবানবন্দি কেন দিলেন না বা সিদ্ধান্ত বদল করলেন সে সম্পর্কে পিবিআই কর্মকর্তারা কিছু বলতে চাননি। তাছাড়া তাকে এই ক’দিন জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কেও বিস্তারিত বলতে রাজি নন পিবিআইর কর্মকর্তারা। তবে এই প্রশ্নের উত্তর যিনি দিতে পারতেন সেই বাবুল আক্তার গতকাল সোমবার হাকিমের খাস কামরা থেকে বের হওয়ার সময় তিনি কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ ঘিরে থাকায় কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি। কালো পাঞ্জাবি পরা বাবুল আক্তারকে তখন খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তারপর দ্রুত গতিতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন বাবুল জবানবন্দি দেননি, সে বিষয়ে তার আইনজীবী আরিফুর রহমানও কিছু বলতে পারেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচীনা টিকা দেওয়া হবে প্রথম ডোজ হিসেবে
পরবর্তী নিবন্ধজবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার, কারাগারে প্রেরণ