রাজা রামমোহন রায় : বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত

| রবিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ

রাজা রামমোহন রায় বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও ধর্মনায়ক হিসেবে সুখ্যাত। অসাধারণ প্রতিভাধর এই ব্যক্তিত্ব তাঁর বিচিত্র কর্মময় জীবনে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন। এ জন্যে তাঁকে আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে মনে করা হয়।। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। রাজা রামমোহন রায়ের জন্ম ১৭৭৪ সালের ১০ মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে। তিনি ছিলেন একাধারে বহুভাষাবিদ, পণ্ডিত, মননশীল চিন্তাবিদ, সমাজসংস্কারক, ধর্মসংস্কারক ও লেখক। পৈতৃকভাবে ছিলেন জমিদার। সেই সুবাদে ইংরেজদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে পাশ্চাত্য জীবনধারার সাথেও তাঁর যোগ ঘটেছিল। বাংলার পাশাপাশি আরবি, ফারসি, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ছিলেন তিনি। বাংলা, ফারসি ও ইংরেজি এই তিন ভাষাতেই রামমোহন বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। পৌত্তলিকতা ও বহু দেবতাবাদের বিরোধিতা, সহমরণ প্রথার বিলুপ্তি, নারীর সামাজিক অধিকার রক্ষা, ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব দৃঢ় অবস্থান, মৌলিক চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। সহমরণ প্রথা উচ্ছেদের জন্য আইন প্রণয়নে রাজা রামমোহন রায় ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করেছিলেন। অবশেষে ১৮২৯ সালে আইন করে এই ভয়াবহ প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সম্পদে নারীর ন্যায্য অধিকারের পক্ষেও তিনি ছিলেন আপোষহীন। তাঁর অবস্থান ছিল সকল ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিপক্ষে। ১৮২৮ সালে রামমোহন তাঁর ধর্মীয় মতবাদ ব্রাহ্মধর্মের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মসমাজ। এই ধর্মের মূল ভাব, নিরাকার ব্রাহ্মোপাসনাই প্রকৃষ্ট ধর্ম। দরিদ্র কৃষকের দুরবস্থা নিরসনে ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। বাংলা ভাষায় আধুনিক প্রবন্ধ সাহিত্যেরও সূচনা করেছিলেন তিনি।

বেদান্ত গ্রন্থ’, ‘বেদান্তসার’, ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’, ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তকের সংবাদ’, ‘পাদরিশিষ্য সংবাদ’ প্রভৃতি রামমোহন রায়ের রচনার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। ‘গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ’ নামে বাংলা ভাষার একটি ব্যাকরণ লেখেন তিনি। ইংরেজিবাংলায় দ্বিভাষিক ব্রাহ্মনিক্যাল ম্যাগাজিন ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ বাংলায় ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ফারসি ভাষায় ‘মীরাৎউলআখবার’ প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেন রামমোহন। ব্রহ্মসংগীত নামে প্রচলিত বিশেষ ধারার সংগীতে রাজা রামমোহন রায় ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুর রচিত গান সংকলিত রয়েছে। উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায় ১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিপ্রেশন এর আদ্যোপান্ত
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনা ও রাস্তায় অবরোধ-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে