রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় (১৮১৪–১৮৭৮)। পত্রিকা–সম্পাদক, সমাজসেবক। ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল কাঁচড়াপাড়ার ভাটপাড়ায়। ছাত্রাবস্থায় তাঁর লেখালেখি ও সাংবাদিকতার প্রতি ঝোঁক ছিলো। তিনি ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে জ্ঞানান্বেষণ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করে পত্রিকা সম্পাদক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে তিনি ভারত পত্রিকা, সমাচার হিন্দুস্থানী ইত্যাদি পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। তিনি বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। একজন খ্যাতনামা বাগ্মিরূপে দক্ষিণারঞ্জন সংবাদপত্র দলন–আইনের বিরোধিতা করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা পৌরসভার প্রথম ভারতীয় কালেক্টর। মুর্শিদাবাদের নবাব নাজিমের দেওয়ান, বর্ধমানরাজের ডেপুটি কালেক্টর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদেও তিনি চাকরি করেন। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি স্থাপনে দক্ষিণারঞ্জন অন্যতম উদ্যোক্তার ভূমিকা পালন করেন। সমাজ ও প্রচলিত রীতির বিরোধী রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করে স্বজনদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে তাঁর আশ্রয় লাভ করেন। দক্ষিণারঞ্জন স্ত্রীশিক্ষার জন্য বেথুন সাহেবকে জমি দান করেন (১৮৪৯); পরে বেথুন বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হলে তার উন্নতির জন্যও তিনি নানাভাবে সাহায্য–সহযোগিতা করেন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সপরিবারে লক্ষ্ণৌ চলে যান এবং সেখানে অল্পদিনেই বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্ণৌতে তিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ও লক্ষ্ণৌ ক্যানিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং লক্ষ্ণৌতে টাইমস পত্রিকার স্বত্ব কিনে নিজেই সম্পাদনা করেন। তিনি লক্ষ্নৌ তথা অযোধ্যার সহকারী অবৈতনিক কমিশনার এবং জমিদারদের শিক্ষায়তন ওয়ার্ড ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক কমিশনার ছিলেন। লক্ষ্ণৌতে সরকার মনোনীত এবং জননির্বাচিত সমান সংখ্যক সভ্য নিয়ে প্রাদেশিক সরকার গঠনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তাঁর প্রতিপত্তি বিনষ্ট হয়। তবে সিপাহি বিদ্রোহে সরকারকে সহায়তা করার জন্য ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড ক্যানিং তাঁকে রায়বেরিলির শঙ্করপুর তালুক জায়গির হিসেবে দান করেন এবং ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড মেয়ো তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই লক্ষ্ণৌতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।