নগরীর রাজাখালীতে বিটুমিন মিক্সার প্লান্টের কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়েছে নগরীর আকাশ। স্থানীয়রা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট প্লান্টটি বসিয়েছেন। এই প্লান্ট থেকে শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, সড়ক জনপদ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অ্যাসফল্ট সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের কাছে ‘শাহ আমানত অ্যাসফল্ট প্লান্ট’ হিসেবে পরিচিত হলেও প্লান্ট সংশ্লিষ্টরা বলছেন এটির নাম ‘কর্ণফুলী অ্যাসফল্ট প্লান্ট’। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, প্লান্টটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) হতে বহদ্দারহাট সংযোগ সড়কের রাজাখালী ব্রিজের সন্নিকটে রাস্তার ধারে অবস্থান অ্যাসফল্ট প্লান্টটির। এটি আধুনিক প্লান্ট হিসেবে দাবি করা হলেও প্লান্টটির কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে বিপন্ন হচ্ছে ওই এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
কথা হলে প্লান্টটির কেয়ারটেকার মো. বখতেয়ার সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এটি সরকারি প্লান্ট। আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাজ করি। আমাদের প্লান্ট থেকে সিটি কর্পোরেশন মাল (অ্যাসফল্ট) নিয়ে যায়।’ পরিবেশ ছাড়পত্র রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো মালিকরা বলতে পারবেন।’ এরপর প্লান্টের উদ্যোক্তাদের পরিচয় ও মুঠোফোন নাম্বার চাইলে তিনি দিব বলে লাইন কেটে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুভাষ, কংকন, রোকনসহ কিছু প্রভাবশালী ঠিকাদার এই প্লান্টটি করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট প্লান্টটি বসিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, সাগরিকায় সিটি কর্পোরেশনের একটি অ্যাসফল্ট প্লান্ট রয়েছে। ওই প্লান্টটিকে ‘ব্যাকডেটেড’ সাজিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যক্তিখাতে অ্যাসফল্ট প্লান্টটি বসানো হয়েছে। এতে সিটি কর্পোরেশন প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে প্লান্টটির কার্যক্রম শুরু হলেও নেওয়া হয়নি পরিবেশগত ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী সোমবার বিকেলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘রাজাখালী এলাকায় এই ধরণের কোন প্লান্টের ছাড়পত্র থাকার কথা নয়। পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার আগে কোন অ্যাসফল্ট প্লান্টের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। তারপরেও ছাড়পত্র ছাড়া এই ধরণের কোন প্লান্ট চালানো হলে এবং কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে বাতাসে এসপিএম (সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার) ২০০ পিপিএম মাত্রার অধিক হলে তাতে পরিবেশ আইন ভঙ্গ হয়।’
পরে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার লিটন রায় চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা একমাস আগে পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জমা দিয়েছি। সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদাররা মিলে আমরা বৈধভাবেই এই প্লান্টটি করেছি।’