দেশের নয় জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন, নিখোঁজ রয়েছেন দুই জেলে। এ ছাড়া অন্তত ২৫টি গরু ও মহিষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে একজন মারা গেছেন। অন্যরা প্রাণ হারিয়েছেন পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, নেত্রকোণা, যশোর, পিরোজপুর, ভোলা, খুলনা ও বাগেরহাটে। এ সময় ঝড়ে গাছ পড়ে বাড়িঘর ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ঝড়ে গাছ ভেঙে পটুয়াখালীর বাউফলে এবং পিরোজপুর সদর উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া বজ্রপাতে ঝালকাঠি সদর ও কাঠালিয়া উপজেলায় তিনজন, নেত্রকোণার খালিয়াজুরি উপজেলা, যশোরের ঝিকরগাছা, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা, রাঙামটির রাজস্থলী, খুলনার ডুমুরিয়া এবং বাগেরহাটের কচুয়ায় একজন করে নিহত হয়েছে বলে প্রশাসনের ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
রাজস্থলী : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলায় বজ্রপাতে সাজেউ খিয়াং (৪৮) নামে একজন মারা গেছেন। গতকাল রোববার বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, সাজেউ খিয়াং রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ধনুছড়ি পাড়া গ্রামের অংসাউ খিয়াংয়ের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকালে বাড়ির সামনে কাজ করার সময় বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় সাজেউ নিজ ঘরে চলে আসেন। পরে বিকাল ৩টার দিকে বজ্রপাতে বাসার ভিতরে তার মৃত্যু হয়। রাজস্থলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পটুয়াখালী : বাউফলে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে বৃদ্ধা এবং বজ্রপাতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হওয়া ৩৫ মিনিট স্থায়ী ঝড়ে নদীতে পড়ে দুই জেলেও নিখোঁজ রয়েছে। ঝড়ে বাউফল উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিহত দুইজন হলেন– উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামের জহির সিকদারের ছেলে রাতুল শিকদার (১৪) ও দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের মৃত আহম্মেদ প্যাদার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৮০)। নিখোঁজ জেলেরা হলেন– চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর অডেল এলাকার মন্নান ফরাজি ছেলে ইব্রাহিম ফরাজি এবং মনু রাঢ়ীর ছেলে ইসমাইল রাঢ়ী। বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ঝড় হয়। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতের শব্দে কিশোর রাতুলের মৃত্যু হয়। তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার অবস্থায় ঝড়ের কবলে পড়ে ইব্রাহিম ফরাজি ও ইসমাইল রাঢ়ী নিখোঁজ রয়েছেন।
পিরোজপুর : ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কয়েকশ ঘরবাড়ি। এ সময় গাছ পড়ে এক নারীর প্রাণ গেছে। গতকাল রোববার সকাল পৌনে ১০টার দিকে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ঝড় শুরু হয়। এতে পিরোজপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নিহত ২৫ বছর বয়সী রুবি বেগম সদর উপজেলার শারিকতলা ইউনিয়নের মরিচাল গ্রামের মীরাজ শেখের স্ত্রী। ঝড়ের মধ্যে রুবির ঘরের উপরে গাছ পড়লে, তাতে চাপা পড়ে তার মৃত্যু হয় বলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান।
ঝালকাঠি : গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলে ঝালকাঠির আকাশ মেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সেই সাথে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে। বেলা ১১টার দিকে জেলার পৃথক এলাকায় বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহতরা হলেন, হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা (১১)। ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে ঘরে আনতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে পৃথক স্থানে তিনজন নিহত হয়েছেন।
নেত্রকোণা : বজ্রপাতে নেত্রকোণায় খালিয়াজুরী উপজেলার হাওরে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার রাজঘাট হাওরে বজ্রপাতে এই নিহতের ঘটনা হয়। নিহত ৫২ বছর বয়সী শহীদ মিয়া উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন তার ভাই। দুপুরের দিকে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমার ভাই। এতে আমাদের গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
যশোর : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি। নিহত আব্দুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে। জাহান আলি বলেন, সকালে বাড়ির পাশের বিলে নিজের ধানক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন আব্দুল মালেক। এ সময় বৃষ্টিপাতের সঙ্গে হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
ভোলা : ভোলায় ঘূর্নিঝড়ে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক গাছপালা উপড়ে পড়েছে, নিহত হয়েছে একজন। গতকাল রোববার দুপুরে সদর, মনপুরা ও লালমোহন উপজেলার ওপর দিয়ে এ ঝড় বয়ে যায় বলে ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান জানান। নিহত ৬৮ বছর বয়সী হারেস আহমেদের বাড়ি লালমোহন উপজেলার ফরাসগঞ্জ ইউনিয়নে। লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, লালমোহন উপজেলার বদরপুর এলাকায় ভিক্ষা করার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে হারেস। এ সময় সে স্থানীয় মনির হোসেনের ঘরে আশ্রয় নেয়, সেখানে ঘর চাপায় সে মারা যায়।
বাগেরহাট: কচুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চর সোনারকুড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন জানান। নিহত লিকচান সরদার (৩৫) ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। পরিবার জানিয়েছে, ঝড়ের সময় গ্রামের মাঠে থাকা গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তিনি নিহত হন।
খুলনা: ডুমুরিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে এক মাছ চাষির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার গুটুদিয়ার কোমলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত কুমার সাহা জানান। নিহত ওবায়দুল্লাহ গাজী (২৫) ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গাজীর ছেলে। পরিবার জানায়, ওবায়দুল্লাহ বাড়ির পাশের কানাইডাঙ্গা বিলে মাছের ঘেরে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
