নিজেদের মাঠে জয় দিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের মিশন শুরু করেছিল চিটাগাং কিংস। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে হেরে সে লক্ষ্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। তবে চতুর্থ ম্যাচে এসে আবার জয়ের ধারায় ফিরল কিংস। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুর্বার রাজশাহীকে ১১১ রানের বিশাল ব্যবধ্যানে হারিয়েছে চিটাগাং কিংস।
বলা যায়, রাজশাহীকে উড়িয়ে দিয়ে জয়ে ফিরেছে স্বাগতিকরা। এবারের বিপিএলে রানের বন্যা বইছে। গতকালও দুইশর কাছাকাছি স্কোর করেছে চিটাগাং। যা টপকাতে পারেনি রাজশাহী। অথচ আগের দিন খুলনার বিপক্ষে দুইশর বেশি রান তাড়া করে জয়ের প্রায় কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল এনামুল হক বিজয়ের দল। কিন্তু গতকাল কোন রকমের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেনি রাজশাহী। ফিল্ডিংয়ে একের পর এক ক্যাচ মিস, ওভার থ্রো, মিস ফিল্ডিং মিলে হতশ্রী এক দল ছিল রাজশাহী। আর ব্যাট হাতেতো আরো বিবর্ণ। দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে ফিরেছেন একের পর এক ব্যাটার। পরিণতি যা হওয়ার তাই হলো। বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বিজয়–রাব্বিদের। অধিকনায়ক বদল করেও নিজেদের ভাগ্যের বদল হয়নি রাজশাহীর। এটি তাদের নবম ম্যাচে ষষ্ঠ হার। আর চিটাগাং কিংসের অষ্টম ম্যাচে পঞ্চম জয়। চিটাগাং কিংসের কাছে হারের ফলে শেষ চারের দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল রাজশাহী। নয় ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৬। অপরদিকে ৭ ম্যাচে খুলনার পয়েন্টও ৬। এই জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে চিটাগাং কিংসের পয়েন্ট ১০। বরিশালের পয়েণ্টও সমান ১০। কিন্তু এক ম্যাচ কম খেলা বরিশাল রয়েছে পয়েণ্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা চিটাগাং কিংস ৮ রানে হারায় ওসমান খানকে। টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলেন এই পাকিস্তানী। দ্বিতীয় উইকেটে নাঈম ইসলাম এবং গ্রাহাম ক্লার্ক মিলে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দ্রুত ঘুরাতে থাকে রানের চাকা। দুজনই ছুটছিলেন হাফ সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৪৫ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়ে ফিরেন ক্লার্ক। ২৮ বলে ২টি চার আর ৩টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন ক্লার্ক। এরপর নাঈমের সাথে যোগ দেন অধিনায়ক মিথুন। যদিও হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করার পর আর বেশিদূর এগুতে পারেননি নাঈম। সানজামুল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ৪১ বলে ৫৬ রান করে। মেরেছেন ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কা।
হায়দার আলিকে নিয়ে ২৫ রান যোগ করেন মিথুন চতুর্থ উইকেটে। দুইবার জীবন পেয়ে মিথুন শেষ পর্যন্ত ফিরেন ২০ বলে ৩২ রান করে। মেরেছেন ২টি চার আর ২টি ছক্কা। শামীম হোসেন ব্যর্থ হয়েছেন এই ম্যাচেও। তবে শেষ দিকে রাহাতুল ফেরদৌস এবং হায়দার আলির ঝড়ে ১৯১ রান সংগ্রহ করে চিটাগাং কিংস। হায়দার আলি ১৪ বলে ২৫ আর রাহাতুল ফেরদৌস ৮ বলে করেন ১৬ রান। রাজশাহীর পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন এবং মোহর শেখ।
১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় দুর্বার রাজশাহী। বিনুরা ফার্নান্ডোর বলে উইকেটের পেছনে মিথুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন জিসান আলম ৪ রান করে। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং আরাফাত সানি নিজের প্রথম ওভারে মোহাম্মদ হারিসকে ফেরান ওসমান খানের ক্যাচ বানিয়ে। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিলেন ইয়াসির আলি রাব্বিও। ফিল্ডিং এর সময় সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেওয়া রাব্বি ব্যাট হাতে করেছেন ৫ রান। শরীফুলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন রাব্বি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আকবর আলিকেও ফেরান শরীফুল। ১০ রান আসে এই উইকেট রক্ষকের ব্যাট থেকে। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় রাজশাহী। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে যাচ্ছিলেন এনামুল হক বিজয়। তবে এবার আর পারলেন না। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে না পারা বিজয় এই ম্যাচে ফিরলেন ২১ বলে ২১ রান করে। খালেদ আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে মিথুনের হাতে ক্যাচ দেন বিজয়।
ব্যাট হাতে ঝড় তোলা নাঈম বল হাতেও নিলেন উইকেট। নিজের প্রথম ওভারে বল করতে এসে ফেরালেন মার্ক ডিনালকে। এলবিডব্লিউর আবেদন আম্পায়ার নাকচ করে দিলেও রিভিও নিয়ে ডিনালকে ফেরান নাঈম। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে আবার উইকেট নিলেন নাঈম। এবার তার শিকার রাজশাহীর অধিনায়ক তাসকিন। এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরেন তাসকিন। তার আগে অবশ্য সানজামুলকে ফেরান শামীম হোসেন। রাহাতুল ফেরদৌস নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফেরালেন মোহর শেখকে। ইনজুরিতে থাকায় ব্যাট করতে নামতে পারেননি রায়ান বার্ল। ফলে ৮০ রানে অল আউট হয় রাজশাহী। আর চিটাগাং কিংসের জয়টা ১১১ রানের। ব্যাটে–বলে অল রাউন্ড নৈপূণ্যের জন্য ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাঈম ইসলাম।