নির্বাচিত সরকারের অধীনে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি তোলায় রাজনৈতিক দলগুলোর অতীতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, আজকে তারা বলছে, সংস্কার তারাই সবচেয়ে ভালো করতে পারবে, এটাই তো গণতান্ত্রিক দেশের কথা। তাহলে তারা ৫৩ বছর কেন করেন নাই?
গতকাল শুক্রবার গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদের সামনে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক এক কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ডিসেম্বরেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এতে বিধিমালায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ক্ষমতা দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, কেন আজকে আমাদের দায়িত্ব নেওয়া লাগল, উড ইউ প্লিজ অ্যানসার? তাদেরকে (রাজনৈতিক দল) ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না–এটা সঠিক কথা, এটাই তো হওয়া উচিত। খবর বাসস ও বিডিনউজের। তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সমস্যার সমাধান করবে। তাহলে আজকে বায়ুদূষণ নিয়ে আমাকে কেন প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। শব্দ দূষণ নিয়ে গুলশান সোসাইটিকে কেন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হচ্ছে। তারা যে সমস্যার সমাধান করে ফেলবে– তারা কি কোনো রূপকল্প আমাদেরকে দিয়েছে? তারা বলছে, রোডম্যাপ দিতে হবে, এই করতে হবে। তারা কি একটি রোডম্যাপ দিয়েছে যে তারা কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করবে? এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, নির্বাচন কতদূর তা প্রধান উপদেষ্টা নিজেই আপনাদের জানাবেন। তিনি বলেন, একটা নির্বাচনের দিকে যেতেই হবে এই দেশকে– এটাই হচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বড় প্রাধান্য, ঠিক তেমনই সংস্কারও বড় একটি প্রাধান্য। সংস্কারের কথা তো আমরা বলি নাই, জনগণের কাছ থেকেই তো সংস্কারের কথা ঊঠে এসে, সেটাও বিচার করতে হবে। রাজনীতিকদের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজওয়ানা বলেন, যারা নির্বাচন চাচ্ছেন, তারা কেন আজকে বলছেন– তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা যদি সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারতেন, তাহলে তো তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা তুলতেন না– তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংশোধনীটা বাতিল করে দেওয়াটা ভুল ছিল। কেন তাহলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলো একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে না।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে গত সোমবার ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর দুই দেশের তরফেই সম্পর্কোন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের (বাংলাদেশ) সম্পর্ক নন–ফাংশনাল (নিষ্ক্রিয়) মোটেও নয়, যদি নন–ফাংশনাল হত, তাহলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে আসতেন না। তিনি এসে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে গেছেন। একটা রাজনৈতিক কারণকে কেন্দ্র করে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি মেঘ এসেছিল, আমাদের উভয়ের স্বার্থে সেটা সড়াতে হবে। আর সেই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। এখন সব কিছুরই যদি তাড়াতাড়ি সমাধান চাই, তাহলে হবে না। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমরা বারবার বলছি, সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই। ভারতও বলেছে, তারা সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়।
রিজওয়ানা বলেন, বাংলাদেশে একটি গণঅভ্যুত্থান, এটাকে অস্বীকার করে পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গণঅভ্যুত্থানের বিষয়টি তারা বিবেচনা করছে ও স্বীকার করছে এবং তারা এটাও বলছে, অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য তারা আগের মতো করে আর মানছে না। তাতে আমি মনে করি, সম্পর্ক উন্নয়নের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরো বলেছেন, ডিসেম্বরেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এতে বিধিমালায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ক্ষমতা দেয়া হবে। শুধু জেল–জরিমানা করলেই হবে না, মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ আনতে হবে। শব্দদূষণ আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটি নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা দরকার।
গাড়িচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভাবুন– হর্ন নষ্ট, বাজাবেন না। গাড়ির গতি কমালে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমবে। ঢাকার ১০টি এলাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সবাই সচেতন হলে শব্দদূষণমুক্ত একটি বাসযোগ্য শহর গড়া সম্ভব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন– রাজউক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দা মাছুমা খানম, গুলশান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ওমর সাদাত, ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আলমাস কবির ও মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবীব। পরে উপদেষ্টা গুলশান লেক পরিদর্শন করেন এবং সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের পরামর্শ দেন।