রাজনীতির নন্দিত মুখ : রফিকুল আনোয়ার

মোস্তফা কামাল পাশা | শুক্রবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম তথা ফটিকছড়ির গণ মানুষের আপনজন সবেক এমপি রফিকুল আনোয়ার। ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃ সংগঠনের মজবুত ভিত তৈরির একজন সুদক্ষ কান্ডারি। ২৫ অক্টোবর তাঁর ৮ম প্রয়াণবার্ষিকী। টানা দু’বারের নির্বাচিত এমপি রফিকুল আনোয়ার ২০১২ সালের এদিন অনন্তলোকে পাড়ি জমান।
দলের চরম দুঃসময়ে ৮০ দশকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দানবীর রফিকুল আনোয়ার আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে আসেন। তখন এরশাদ সরকারের মদদপুষ্ট আধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত জামাত-শিবির চক্র নাজিরহাট কলেজকে দুর্গ বানিয়ে হাটহাজারী-ফটিকছড়িসহ পুরো চট্টগ্রামে বাছাইকরা বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের টানা খুন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব কলেজ- বাজারে দিনে-দুপুরে হামলা হচ্ছে! ভয়াল সময়ে রফিকুল আনোয়ারের অভিষেক। তখন প্রতিদিনই ফটিকছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রাম শিবির নাসির-এয়াকুবের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী ও সাকা চৌধুরীর ক্যাডার একযোগে পুরো জনপদকে মৃত্যু উপত্যকায় বানায়। চট্টগ্রাম কলেজের সামনে রিকশা থেকে নামিয়ে ৮২ সালে সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস তবারককে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে শিবিরের খুনের রাজনীতি অভিষেক হয়। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ, এমইএস কলেজ, কমার্স কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ, পলিটেকনিক নাজিরহাট, রাউজানও ফটিকছড়ি কলেজে প্রতিদিনই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে খুণ করা হয় অসংখ্য সাহসী ছাত্র, যুবলীগ নেতা-কর্মি। নাজির হাট কলেজ ভিপি আমিনুল করিম জাহাঙ্গীর, রুবেল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবর, রাউজান কলেজ ভিপি মুজিব, এমইএস কলেজের বেলাল, নাজির হাট কলেজের জমির, শ্যামল, হেলাল,ফুটবলার দিদারসহ তুখোড় অগনিত ছাত্র নেতাকে হত্যা করে তারা আহতের সংখ্যা অসংখ্য। কোন বিচার নেই-গ্রেপ্তার নেই, উল্টো এরশাদের পুলিশ বাহিনী ঘাতক ক্যাডারদের সব ধরনের ভিআইপি প্রটোকল দিত।
ভয়াল মৃত্যু উপত্যকায় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাঁচিয়ে রাখতে মরণপণ লড়াই করছি। সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি আমি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ভয়াল দুর্যোগে রফিক ভাই, হাটহাজারীর আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন, ম ইদ্রিস, এস এম কামাল উদ্দিন, মরহুম বাদশাহ আলম, সাবেক এমপি নুরুল আলম চৌধুরী, এ্যডভোকেট নুরুল হুদাসহ আরো অনেক নেতা শিবিরের টানা সন্ত্রাস রুখতেনআওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সুসংগঠিত করেন। নাজিম ভাই রফিক ভাই শিবির-এনডিপি সশস্ত্র চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবসময় পাশে ছিলেন। এরজন্য প্রচুর মূল্যও গুণতে হয় তাঁদের। বার বার জীবনের উপর হামলা হয়। পিছু ফিরেননি, দমেননি। তাঁদের টানা পরিশ্রম ও সহযোগিতায় উত্তর চট্টগ্রাম শিবির চক্রের ভয়াল প্রকাশ্য হামলা কিছুটা দমে যায়। নাজিম ভাই ৮৬ ও ৯১সালে দু’দফা হাটহাজারী আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও করেন। প্রথমবার এরশাদের আব্দু বাহিনীর শ্বেত সন্ত্রাস এবং দ্বিতীয়বার দলীয় দুর্বলতায় সাফল্য আটকে যায়। ‘৯২ সালের ৩ জানুয়ারি অকালেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে। তুলনায় রফিক ভাই নির্বাচনী রাজনীতিতে সফল। ‘৯১ সালে নিজে প্রার্থী না হয়ে নবাগত নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিকে (বর্তমান শরিক দলের এমপি) সমর্থন দিয়ে জিতিয়ে আনেন। ৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে দু’দফা টানা এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপিকে জিতিয়ে আনতে দেশব্যাপী চাপেও ফটিকছড়িতে রফিকুল আনোয়ারের জয় ঠেকাতে পারেনি। রফিক ভাই ছিলেন গণ মানুষের নেতা। মৃত্যুকালীন তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সি, সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ফটিকছড়ির কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তাঁর সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার নজির নেই। সরকারি বরাদ্দের বাইরে দু’হাতে জনকল্যাণমুখী কাজে নিজের টাকা খরচ করেছেন। গড়ে তুলেছেন, নানুপুর লায়লা-কবির ডিগ্রি কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট। ফটিকছড়িকে উন্নত জনপদ হিসাবে গড়ার রূপকার হচ্ছেন- আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার। দুর্ভাগ্য,এক/এগারোর সরকার তাঁকে সাজানো অভিযোগে গ্রেপ্তার করে প্রচন্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে নামাজে জানাযার সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ভাই রফিক ভাইয়ের উপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এটা নিশ্চিত, হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের কারণেই অকাল মৃত্যুর শিকার হয়েছেন তিনি ।
তাঁর মৃত্যুতে ফটিকছড়ি তথা চট্টগ্রামের মানুষ হারিয়েছে, একজন মানবতাবাদী নেতাকে। এটা শুধু ফটিকছড়ি নয়, আওয়ামী পরিবারের জন্য এক বড় ক্ষতি। জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য রফিক ভাইয়ের অবদান ভুলেন নি। তাঁর একমাত্র মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে সংরক্ষিত আসনের এমপি হিসাবে নির্বাচিত করে এনেছেন। আশা করি মরহুমের সুকর্মের দীপশিখা সনি আরো প্রোজ্জ্বল করে বাবার মানবতাবাদকে চির অম্লান রাখবে। ছোটভাই ফখরুল আনোয়ারও বিদায়ী চট্টগ্রাম জেলা কমিটির বিভাগীয় সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। গণ মানুষের প্রিয়জন রফিকুল আনোয়ারের পবিত্র স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুই শিক্ষকের ভবিষ্যৎ
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা