শতবর্ষী চট্টগ্রাম সমিতি–ঢাকা। একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হরিকেল থেকে চট্টগ্রাম। চৌদ্দশ বছরের প্রাচীন শহর প্রাণের শহর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামকে নাকি বলা হতো ‘দাখিল বাঞ্জালিয়া বা বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। সেই ১৯১২ সালের কলকতা শহরের জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম মোছলেম ছাত্র সমিতি, কালের বিবর্তনে ১৯৩৮ সালে চট্টগ্রাম মোসলেম ছাত্র ও জন সমিতি কলকতা ১৯৫৪ সালে ইসলামাবাদ সমিতি–ঢাকা পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম সমিতি–ঢাকা বর্তমানে চট্টগ্রাম সমিতি লিঃ। যান্ত্রিক নগরী ঢাকার বুকে ৩২ তোপখানা রোডে ৬.৫২ কাঠা জমির উপর ১০তলা বিশিষ্ট এক খন্ড চট্টগ্রাম দাঁড়িয়ে গেল ঢাকাবাসী যেন টেরও পায়নি। এ যেন চাটগাঁবাসীর স্বপ্ন দিয়ে তৈরি ‘চট্টগ্রাম ভবন’। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার উদ্যেগে রাজধানীর বুকে চট্টগ্রাম সমিতির মালিকানাধিন একটি আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাসহ ইতোমধ্যে হাসপাতালের জন্য জমি ক্রয়ও করা হয়েছে প্রাচ্যর সৌন্দর্য অরণ্যরাণী চট্টগ্রামের পাহাড়, সাগর, ইতিহাস, ঐতিহ্য, নিজস্ব সাংস্কৃতি, মেজবান ও আতিথেয়তা পৃথিবীর মানব সমাজের কাছে বিস্ময়–র বিষয়ও বটে। চট্টগ্রামের ইতিহাস আজ পুরো বিশ্ব দরবারে পৌছেঁ গেছে চট্টগ্রাম সমিতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা।
চট্টগ্রাম সমিতি করার পেছনে শুরুর দিকে যে সকল চট্টল দরদী ও জনহিতৈষি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের কয়েকজনের নাম স্মরণ না করলে দায়বদ্ধতা থেকে যায়। সুফী ব্যক্তিত্ব খান বাহাদুর মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মওলানা নজির আহমদ চৌধুরী, খান বাহাদুর ফজলুল কাদের, আবদুল ওহাব চৌধুরী, আবদুল গণি চৌধুরী, এডভোকেট নুরুল হক চৌধুরী, ফকরে বাংলা আবদুল হামিদ, সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী এরাই ছিলেন কলকতা চট্টগ্রাম সমিতির নেপথ্য নায়ক।
প্রতিবছরের ন্যায় এবার রাজধানীতে চাটগাঁবাসীর মেজবান ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেজবান ও মিলনমেলা মানে চট্টগ্রামের মানুষের মনের অনুভূতি বিনিময়, আড্ডা, হাসি আর আনন্দ মুখরিত একটি দিবস। বলা যায় ঢাকায় বসবাসরত চট্টগ্রামবাসীর জন্য একদিন। চট্টগ্রামের নয় শুধু দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্যও একটি প্রাণের উৎসবও বটে।
মেজবান, মিলনমেলা ও বলীখেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে আনন্দের উৎসাহ ও উদ্দীপনা চাটগাঁবাসীর হৃদয়ে সেতুবন্ধ রচনা করে তা মনের স্মৃতির ঝাঁপিতে ধরে রাখার জন্য প্রতিবারের ন্যায় এবারও সমিতির স্মারক ‘চট্টলশিখা’ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনা মানে অনেকটা প্রসব বেদনার মতো। সমিতির একজন জীবন সদস্য হিসেবে বিভিন্নসময়ে সৃজনশীল কাজে প্রকাশনার দায়িত্বে নিয়োজিত উপ–কমিটি থেকে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ২০১১ সালে শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিক, শিল্পী লেখকদের নিয়ে আয়োজন হয়েছিল চট্টল লেখক সম্মেলন। সমগ্র বাংলাদেশে একটা জেলার সৃজনশীল মানুষদের নিয়ে এধরনের আয়োজন হয়েছে কিনা সন্দেহ। চট্টগ্রাম সমিতি পরিবার এটা প্রশংসার দাবী রাখেন। প্রতিবছর মেজবান মিলনমেলার পাশাপাশি ১২ মাসে ১৩ অনুষ্ঠান লেগে থাকে। উল্লেখযোগ্য, বার্ষিক সাধারণ সভা, প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন, অভিষেক অনুষ্ঠান, ভাষা আন্দোলনে চট্টগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম, অগ্নিযুগে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, মেধাবী ছাত্র–ছাত্রীদের শিক্ষা বৃত্তি ও সংবর্ধনা, বাংলা একাডেমি পদক ও একুশের পদক প্রাপ্তদের সংবর্ধনা, জাতীয় সমৃদ্ধির স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন অপরিহার্য, গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম সুফিবাদের প্রভাব, জনপ্রশাসনে চট্টগ্রাম, এছাড়াও প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ উদযাপন, ঈদ পুনর্মিলনী, ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন, জাতীয় দিবসগুলো পালনসহ সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যেকটি থানার দু:স্থ মানুষদের মাঝে ভ্যান গাড়ি, সেলাই মেশিন বিতরণসহ অসুস্থ মানুষ ও নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি আর্থিক সাহায্যের মধ্যে ভালোাবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আসছে চট্টগ্রাম সমিতি পরিবার।
বাংলাদেশে রাজধানীর বুকে সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা। শুধু তাই নয় অত্যন্ত সুনামের সহিত চট্টগ্রাম সমিতি ১১৪ বছর পেরিয়ে গেছে। চট্টগ্রামবাসীর শেকড় এবং প্রাণের সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি। এটি টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের । দল–মত নির্বিশেষে একটি অরাজনৈতিক সেবামুলক সামাজিক সংগঠন শুধু তাই নয় গঠনতন্ত্র অনুসারে ন্যায়পরায়ণতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে শতবর্ষ পেরিয়ে এসেছে। রাজধানীর বুকে চট্টগ্রামের শেকড় চট্টগ্রাম সমিতি এটা আমাদের অহংকার। এতো বড়ো সমিতি সমগ্র বাংলাদেশে দ্বিতীয় আরেকটি নেই। বিনয় মানুষকে মহৎ করে, খাটো করে না। ঔদ্ধত্য মানুষকে কাছে টানে না, দূরে ঠেলে দেয়। আসুন আমরা রাজধানীতে বসবাসরত সকল চাটগাঁইয়া ভাই বোনরা মিলে চট্টগ্রাম সমিতিকে সমগ্র বাংলাদেশে একটি মডেল হিসেবে উপস্থাপন করি। জয়তু চট্টগ্রাম সমিতি পরিবার।