রাজকাঁকড়ার যে সম্ভাবনার কথা বললেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | বুধবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ভারতের উড়িষ্যার রাজকাঁকড়া বিশেষজ্ঞ ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিসওয়াল বলেছেন, রাজকাঁকড়ার রক্ত থেকে আমেরিকা, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ অত্যন্ত দামী ওষুধ উৎপাদন করছে, যেটি লিমুলাস এ্যামোবিসাইট লিসেট বা লাল (এলএএল) নামে পরিচিত। একই পথে বাংলাদেশও রাজকাঁকড়ার রক্ত থেকে কেএএল বা কাল নামে ওষুধ তৈরি করতে পারে। দেশের সুনীল অর্থনীতিতে এর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দুইদিন মহেশখালীর গোরকঘাটা, আদিনাথ ও সোনাদিয়া দ্বীপ পরিদর্শন শেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে একথা বলেন ভারতের কেএন কলেজ অব বেসিক সায়েন্সের সাবেক অধ্যক্ষ ও রাজকাঁকড়া বিশেষজ্ঞ ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিসওয়াল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই জাতের রাজকাঁকড়া রয়েছে। এরমধ্যে মহেশখালীর ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে কার্সিনোকর্পিয়াস রোটোন্ডোকডার বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে এখানে হাজার হাজার রাজকাঁকড়া ডিম পাড়তে আসে। এরপর সেই ডিম থেকে রেণু ফোটে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালিত হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। এই প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিসওয়াল বলেন, রাজকাঁকড়ার অঙ্গ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক ধরনের স্যুপ তৈরি হয়, যেটি শরীরে রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে।

. গোবিন্দ রাজকাঁকড়া নিয়ে গবেষণা ও একটি সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) আমন্ত্রণে গত সপ্তাহে কক্সবাজারে আসেন। তিনি বোরি গবেষকদের সাথে গত দুইদিন মহেশখালীর গোরকঘাটা, আদিনাথ ও সোনাদিয়া দ্বীপে রাজকাঁকড়ার প্রজননক্ষেত্র ও প্রতিপালন ক্ষেত্রসমূহ পরিদর্শন করেন। এ সময় বোরির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রাজকাঁকড়া গবেষক তরিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা সাথে ছিলেন। ড. গোবিন্দ চন্দ্র বিসওয়াল বলেন, রাজকাঁকড়ার রক্ত থেকে বর্তমানে লিমুলাস এ্যামোবিসাইট লিসেট বা লাল (এলএএল) ও টেকিপ্লিয়াস এ্যামোবোসাইট লাইসেট বা টাল (টিএএল) নামে দুই ধরনের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ প্রথমবারের মত তৈরি করতে পারে কার্সিনোকর্পিয়াস এ্যামোবিসাইট লিসেট বা কাল।

তিনি জানান, এই জাতের রাজকাঁকড়া ভারতেও রয়েছে। তবে ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কার্সিনোকর্পিয়াস রোটোন্ডোকডার জাতটির আকারে সামান্য হেরফের রয়েছে। তাই বাংলাদেশের জাতটি একটি উপপ্রজাতির বা স্থানীক হতে পারে।

বোরির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রাজকাঁকড়া গবেষক তরিকুল ইসলাম জানান, বোরির বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে কার্সিনোকর্পিয়াস রোটোন্ডোকডা বা কাদার রাজকাঁকড়ার রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন। একেকটি রাজকাঁকড়া থেকে ওজনভেদে ২ থেকে ৩ মিলিলিটার পর্যন্ত রক্ত নেয়া যায়, এতে ওই রাজকাঁকড়ার কোনো ক্ষতি হয় না।

কঙবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্রাণীটি ‘দিয়ও কিঁয়ারা’ বা দৈত্য কাঁকড়া নামেই সমধিক পরিচিত। আন্তর্জাতিক বাজারে এক গ্যালন রাজকাঁকড়ার রক্তের দাম অন্তত ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ৮০ লাখ টাকা। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতেও রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চিকিৎসাশাস্ত্রে রাজকাঁকড়ার রক্তের যাদুকরী গুণ ও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে ২০১৯ সালে দেশে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী। এরপর ২০২১ সাল থেকে বোরিসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রাজকাঁকড়া নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এক ছাত্রকে হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধপাইকারিতে কমল দেশি পেঁয়াজের দাম