রাঙ্গুনিয়ায় বাড়ছে আউশ ধানের আবাদ। বোরো ও আমনের মধ্যবর্তী সময়ে আউশ আবাদ হওয়ায় উপজেলার দুই ফসলি জমিগুলো এখন তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আউশের ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে পাখির উপদ্রবে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছেন কৃষকরা। তাই ক্লাস্টার পদ্ধতিতে আবাদের পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের দিকে রাঙ্গুনিয়ার ৩০০ জন কৃষককে পাঁচ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫টি প্রদর্শনী এবং ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প থেকে আরও চারটি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিজন কৃষককে ৪০–৪৫ কেজি হারে সার, ১০ কেজি বীজ ও সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। কৃষকরা এর সপ্তাহের মধ্যেই বীজতলায় বপন করেছে এবং মে মাসের দিকে চারা রোপণ করে। যা বর্তমানে ফলন আসতে শুরু করেছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই আউশ ধান উঠবে কৃষকের ঘরে। হেক্টর প্রতি ৫ টনের অধিক ফলনের প্রত্যাশা কৃষকদের। জানা যায়, অনেক আগে থেকেই রাঙ্গুনিয়ায় আউশের আবাদ চলে এলেও মাঝখানে তা অনেকটা কমে আসে। গেল ৪–৫ বছর ধরে আবারও পুরোদমে আউশের আবাদ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে উপজেলার ৮২ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের শুরুতে বৃষ্টি কম হওয়ায় উপজেলার ৭০ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিলো। তবে এবার ৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, আউশ আবাদের জন্য কৃষকরা ব্রিধান–৪৮, ব্রিধান–৯৮ ও ৯৫ জাত লাগিয়েছেন। পাহাড়ের পাদদেশে, খালের পাড়ে কিংবা সড়কের পাশে আবাদ হয়েছে আউশ ধানের। ইতোমধ্যেই ধানের ফলন আসতে শুরু করেছে। তবে আবাদগুলো নেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। পাখির উপদ্রব থেকে ফলন রক্ষায় এসব দেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। লালানগরে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফরন্নেছা জানান, গত দুই বছর আগেও এই ইউনিয়নে আউশ আবাদ হতো না। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রণোদনা এবং প্রদর্শনী দেয়ায় এখন কৃষকরা আউশ আবাদ করছেন। এতে বোরো চাষের পর খালি পড়ে থাকা অনেক অনাবাদি জমিও এখন আবাদের আওতায় এসেছে। ইতোমধ্যেই ফলন আসতে শুরু করেছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যেই ফলন আসবে বলে জানান তিনি।
এই ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ সাইদুল জানান, ২০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন তিনি। তিনি ব্রিধান–৪৮ জাতের লাগিয়েছেন। বেশ ভালোই ফলন এসেছে। হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ টন ফলন আসতে পারে। তবে পাখির উপদ্রবের কারণে কষ্টের ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, ইছামতী নদীর বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে আউশ আবাদ হয়েছে। মরিয়মনগর বালির চর, উপজেলার বেতাগী, পদুয়া, দক্ষিণ রাজানগর, সরফভাটাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে আউশ আবাদ হয়েছে। কোথাও কাটার উপযুক্ত হলেও কোথাও আবার কুশি অবস্থায় রয়েছে আবাদ। রাজানগরের কৃষক কামাল হোসেন জানান, তিনি ৫৫ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। ধান পরিপক্ক অবস্থায় আছে। আউশ ধান ওঠে গেলে আমন আবাদ করবেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, আউশ শব্দের অর্থ আগাম। বাংলা আশু শব্দ থেকে আউশ শব্দের উৎপত্তি। ১০০ থেকে ১২০ দিনের ভেতর এ ধান ঘরে তোলা যায়। দ্রুত ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের এমন নামকরণ হয়েছে। আউশে আমন বোরোর মতো যত্ন নিলে বাম্পার ফলন হয়। প্রণোদনা হিসেবে এবার দেয়া ব্রিধান–৯৮ এর জীবনকাল ১১২ দিন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই আউশ ধান আবাদ হওয়ায় ফলন আসার পর পাখির উপদ্রব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নেট দিয়ে রক্ষাসহ কৃষকদের এর হাত থেকে রক্ষায় নানা পরামর্শ সহায়তা করা হয়। তবে দিন দিন এই ধানের আবাদ বাড়ায় ভবিষ্যতে এই সমস্যা আর থাকবে না।