রাঙ্গুনিয়ায় গৃহবধূর মৃত্যু ঘিরে রহস্য, হত্যা মামলা দায়ের

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৪ জুলাই, ২০২৩ at ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় রুমা আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাপের বাড়ির লোকজনের দাবি মেয়ের জামাইকে ধার দেয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে রুমাকে হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছে, নিজ মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে বাড়াবাড়ি করেই পুত্রবধূ আত্মহত্যা করেছে। উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মেয়ে খুনের বিচার পেতে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত গৃহবধূর মা মুন্নি আকতার।

নিহত গৃহবধূ রুমা উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড হরিহর এলাকার মো. ইয়াকুবের মেয়ে। অন্যদিকে আদালতে দায়েরকৃত মামলায় পোমরা হাজীপাড়া গ্রামের ঐ গৃহবধূর শ্বশুর হারুনূর রশীদ (৫৫), শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৫২), স্বামী আনোয়ার হোসেন (২৮) ও তার ভাবী কোহিনুর আকতার (২৬) এবং স্বামীর তিন বোন যথাক্রমে হিরনী আকতার (৩০), কামরুন নাহার (৩২) ও রুমানা আকতারকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত চারপাঁচ বছর আগে সামাজিকভাবে রুমা ও আনোয়ারের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে একটি তিন বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী আনোয়ার দেশে একটি দোকান চালাতো। একপর্যায়ে সে প্রবাসে যাওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে একদেড় লাখ টাকা দাবি করেন। দরিদ্র হওয়ায় প্রতিবেশীর কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেয়ার শর্তে মেয়ের জামাইকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন শ্বশুরশাশুড়ি। প্রবাস গিয়ে সে ভালভাবে উপার্জন করলেও ধার নেয়া টাকা ফেরত দিচ্ছিলো না। অন্যদিকে সুদের হার বাড়তে থাকায় ধার নেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় এই নিয়ে সাংসারিক কলহ সৃষ্টি হয়। রুমার উপর নেমে আসে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এর জেরে গত ৮ জুন সকালে গৃহবধূ রুমা তার মাকে মুঠোফোনে তাকে বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। তার মা সকালে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে বের হলে বেলা ১২টার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে জানানো হয় রুমা বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে। দ্রুত পরিবারের লোকজন নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন রুমার নিথর দেহ তার শয়ন কক্ষের খাটে পড়ে রয়েছে। তখন শ্বশুরবাড়ির লোকজন আবার বলে রুমা গলায় ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করে এবং থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেয়া হয়।

এই ব্যাপারে রুমা আক্তারের মা মুন্নি আকতার বলেন, আমার মেয়ে সকালে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। নাতনির জন্য বিস্কুটসহ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। আমি যাওয়ার পথেই তারা মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে প্রথমে বলছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ও পরে বলছে ফাঁসিতে ঝুলে মারা গেছে। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে ফাঁস থেকে নামাতে কেউ দেখেনি, প্রতিবেশীরাও আমার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া ও কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন। প্রবাস থেকে জামাইয়ের নির্দেশে তারা সবাই মিলে পরিকল্পিতভাবে মেয়েকে খুন করে এখন আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি।

এদিকে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। আর আমার স্বামী ও বড় পুত্রবধূ ধার নেয়া টাকা ফেরত দিতে গোচরা বাজার যায়। এরমধ্যে রুমা তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে ঝগড়া করে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এটা আশেপাশের সবাই সাক্ষী দেবে।

রাঙ্গুনিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু বক্কর ভূঁইয়া বলেন, আদালতের মামলার কপি আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ
পরবর্তী নিবন্ধসিজিপিওয়াই থেকে সরানো যাচ্ছে না তিনটি ইঞ্জিন