রাঙ্গুনিয়ায় গরু চুরি, পরে জবাই করে বিক্রি

শনাক্তের পর উল্টো মালিকের উপর হামলা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১ মে, ২০২২ at ৫:৩২ অপরাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারে একটি চোরাই গরু জবাই করে বিক্রি করছিল চোরের দল। অর্ধেকেরও বেশি মাংস বিক্রির পর গরুর মালিক এসে দাবি করেন ওটি তাঁর চুরি যাওয়া গরু।

এতে চোরের দল ক্ষিপ্ত হয়ে গরুর মালিককে মারধর শুরু করে। তার শোর-চিৎকারে বাজারের লোকজন এগিয়ে আসলে গোমর ফাঁস হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতায় গরুর মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে চোরদের ছেড়ে দেয়।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) শান্তিরহাটের সাপ্তাহিক বাজারের দিনে এ কাণ্ড ঘটে। যা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের আছুয়াপাড়া এলাকার দরিদ্র কৃষক মৃত আবদুল গফুরের পুত্র আকতার হোসেন ওরফে গুরাইয়া (৪৫) কোরবানির ঈদে বিক্রির মানসে নিজ বাড়ির আঙিনায় এটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিনগত রাতে চোরের দল প্রায় দেড় লক্ষ টাকার দামের গরুটি চুরি করে নিয়ে যায়।

কৃষক আকতার হোসেন জানান, শনিবার সকালে তিনি আঙিনায় গরুটি দেখতে না পেয়ে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন। আশপাশের এলাকায় কোন খোঁজ না পেয়ে তিনি দুপুরের দিকে শান্তিরহাট বাজারে আসেন। বাজারে স্থানীয় রোসাইপাড়া ৪ নম্বার ওয়ার্ড এলাকার ইউছুপ নবীর ছেলে হাবিবুর রহমান ও মো. আবদুল্লাহর ছেলে আজিজুর রহমান একটি জবাই করা গরু বিক্রি করছেন। তা দেখে তার সন্দেহ হয়।

তিনি গোপনে খোঁজ করে গরুর চামড়াটি বের করে এনে দেখেন, বিক্রি করা গরুটি তার। সে কথা বলতেই গরুর মাংস বিক্রেতারা তার উপর চড়াও হয়ে তাকে মারধর করতে থাকেন। তার শোর-চিৎকারে বাজারের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে মারধর থেকে উদ্ধার করেন।

এ সময় চোরাই গরু জবাই করে মাংস বিক্রির ঘটনাটি ফাঁস হলে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান জহির আহমদ চৌধুরী, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের ও এএম বাবুল ঘটনাস্থলে আসেন।

পরে অসুস্থতা বোধ করলে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে আ’লীগ নেতারা চোরদের ‘দলীয় পোলা’ তকমা লাগিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে গরুর মালিককে একটি আপস-মিমাংসার প্রস্তাব দিয়ে থানায় মামলা না করার বিষয়ে মুছলেকায় স্বাক্ষর নেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আ’লীগ নেতা আবু তাহের ও এ এম বাবুলের মধ্যস্থতায় গরুর মালিক আকতার হোসেনকে গরুর ক্ষতিমূল্য ও চিকিৎসা খরচ বাবদ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে চোরদের ছেড়ে দেন। কিন্তু গতকাল শনিবার দিনশেষেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আকতার হোসেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, ছেলেরা অতীতে এমন কোন কাজ করেনি। গরুটি তারা কিনে নিয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে কার কাছ থেকে কিনেছে তা জানাতে পারেনি। জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেয়ার বিচার প্রক্রিয়াটি স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় হয়েছে বলে তিনি জানান।

ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, ধৃতরা রোসাইপাড়া এলাকার। আর রোসাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা হচ্ছেন সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের ও এ এম বাবুল। তাদের আগ্রহেই জরিমানা করে ধৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দিনশেষেও ভুক্তভোগী জরিমানার টাকা না পাওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি খোঁজ নিচ্ছি। টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করছি।

জরিমানার টাকাটা কে পরিশোধ করবেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কেননা, চোরেরা তো এখন পগারপার।

থানার ওসি (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, বাজারে একটা ঝামেলা হয়েছিল, ওটা নিজেরাই সমাধান করে নিয়েছে। একটা গরু চুরি হলো। সেই গরু জবাই করে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। মালিক ও বাজারের লোকজন বিক্রি করা মাংসসহ চোরদের ধরে প্রশাসনের হাতে তুলে দিল।

থানা ও স্থানীয় সরকার প্রশাসন তাদের ছেড়ে দিল। এসব কিছুকে আপনি স্রেফ একটা ঝামেলা বলছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বুঝেন তো ভাই কার এলাকা। তাদের ইচ্ছের বাইরে তো যেতে পারি না। এছাড়া বাদী হয়ে কোন মামলা করেনি। এ অবস্থায় পুলিশ কি করবে? এসব বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে তিন ছিনতাইকারী আটক
পরবর্তী নিবন্ধআসলাম চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ সভা