রাঙ্গুনিয়ায় চলাচলের প্রধান পাঁচ সড়কের উভয় পাশে বেড়েছে মরা গাছের সংখ্যা। প্রতিদিন বাড়ছে এ রকম গাছের সংখ্যা। এছাড়া সড়কের উপর বিপজ্জনকভাবে হেলে রয়েছে আরও অসংখ্য গাছ। দীর্ঘদিন এসব গাছ অপসারণ না করায় সামান্য বাতাসেই সড়কের উপর গাছ উপড়ে কিংবা ভেঙে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন বন্ধ থাকে। এছাড়া দুর্ঘটনা ঝুঁকি তো রয়েছেই। তাই এসব গাছ অপসারণের দাবি সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগর ডিসি সড়ক ও পারুয়া ডিসি সড়ক এবং দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় গোডাউন থেকে সৈয়দ আলী সড়ক ও কালিন্দী রানী সড়কের দুই পাশে রয়েছে কয়েক শতাধিক মরা গাছ। সামপ্রতিক ঝড়ো হাওয়ায় উক্ত পাঁচ সড়কের মরা গাছের ঢালপালা ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে এসব গাছের অর্ধেক কিংবা অনেক ক্ষেত্রে পুরো গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়েছে। কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত বিশালাকৃতির একাধিক মরাগাছ দেখা গেছে। একইভাবে একাধিক বিশালাকৃতির গাছ সড়কের উপর ঝুঁকে পড়েছে। সামান্য বাতাসেই এসব গাছ সড়কে ভেঙে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সড়কগুলো নির্মাণের পর এর দুই পাশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় কয়েক হাজার শিশু, রেইনট্রি ও মেহগনির চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু ছয়–সাত বছর ধরে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। মরা গাছগুলো অপসারণ না করায় সেগুলোর ভেতরের অংশ পোকা খেয়ে ফেলেছে। ফলে মাঝেমধ্যেই এসব ফাঁপা গাছের ডালপালা সড়কের ওপর ভেঙে পড়ে। গত ৬ মে ঝড়ো হাওয়ায় কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা বুড়ির দোকান, সৌদিয়া গেট, পৌরসভার কাদেরনগর, মডেল মসজিদ এলাকা, মরিয়মনগরের চৌমুহনী বিহার গেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। গাছ কেটে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর দুদিন আগেও এসব স্পটে গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য সড়কগুলোতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবছর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগ দেখা যায় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পারুয়া ডিসি সড়কের পারুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আহমদুল হক বলেন, সামান্য বাতাসেই এসব মরা গাছের ডাল ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত সপ্তাহেও সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ওপর থেকে ভেঙে পড়া ডালের আঘাতে এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন।
এই সড়কের টেঙিচালক নুরুল আজিম মনু বলেন, একটু জোরে বাতাস উঠলেই কখন যে ডাল ভেঙে গাড়ির ওপর পড়ে, এই ভয়ে পারুয়া ডিসি সড়কটি দিয়ে এখন গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। বিশেষ করে উত্তর পারুয়া, ফুলবাগিচা এলাকায় দীর্ঘ মরা গাছের সারি রয়েছে। এসব অপসারণ করা খুবই জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
মরিয়মনগর ডিসি সড়কের ধামাইরহাট এলাকার বাসিন্দা ইসমাঈল হোসেন জানান, এই সড়কের একাধিক স্থানে ছোট–বড় অনেক মরা গাছ রয়েছে। ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে ছোট–বড় সব ধরনের গাড়িই চলাচল করে। এসব গাছ দ্রুত কাটা না হলে, এসব ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সরফভাটা এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম জানান, শুধুমাত্র গোডাউন থেকে ক্ষেত্রবাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারে অন্তত শতাধিক বিশালাকৃতির মরা গাছ রয়েছে। এসব গাছের ঢালপালা প্রায় সময় ভেঙে পড়ে।
ট্রাকচালক আজগর আলী বলেন, পদুয়া থেকে আসার পথে গত কয়েকদিন আগে তার ট্রাকের কাচের ওপর একটি ডাল এসে পড়ে। এতে গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। অল্পের জন্য তিনি দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের এম্বুল্যান্স চালক মোহাম্মদ আলী বলেন, কয়েক বছর আগে হাসপাতাল থেকে মেডিকেলে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় কাপ্তাই সড়কের পাহাড়তলী এলাকায় বিশালাকৃতির একটি গাছ সামান্য বাতাসে এম্বুল্যান্সের উপর ভেঙে পড়েছে। এতে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং আমরা সবাই গুরুতর আহত হয়। কাপ্তাই সড়কের এই গাছগুলো যাত্রী ও চালকদের জন্য এখন মরণফাঁদ।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব জানান, কাপ্তাই সড়কসহ উপজেলার প্রধান চার সড়কগুলোতে মরা গাছগুলো এখন সাংঘাতিক ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথচারী বা যানবাহনের ওপর পরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রচুর গাছ এখানে মারা গেছে। এগুলো অপসারণ করতে উপজেলা পরিবেশ বন উন্নয়ন কমিটির সভা থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বনবিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা নাহিদ হাসান এই ব্যাপারে বলেন, যেসব সড়কে গাছগুলো রয়েছে তা এক এক সংস্থার অধিনে। যেমন কাপ্তাই সড়ক ও মরিয়মনগর ডিসি সড়ক হচ্ছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এবং সৈয়দ আলী সড়ক, কালিন্দিরানী সড়ক এবং পারুয়া ডিসি সড়ক হচ্ছে এলজিইডির। আবার এসব গাছ অনেক ক্ষেত্রে লাগানো হয়েছে স্থানীয় ইউপি কিংবা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে। তাদেরকে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে অপসারণের ব্যবস্থা করবো।