রাঙ্গুনিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পান আলুর

অনলাইনে বীজ সংগ্রহ

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

একসময় বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা ঝোপঝাড়ে বেড়ে ওঠা পান আলু এখন চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এটা গাছ আলু নামেও পরিচিত। রাঙ্গুনিয়ায় প্রথমবারের মতো আবাদ হয়েছে পান আলুর। একজন কৃষক অনলাইনে কিশোরগঞ্জ থেকে বীজ সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে এই চাষাবাদ করেছেন। অল্পখরচ, তবে উৎপাদন ও বাজারমূল্য বেশি থাকায় অন্যান্য কৃষকরাও এই পান আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের হরিহর গ্রামের কৃষক মো. রফিক উদ্দিন প্রথমবারের মতো পান আলু চাষাবাদ করেছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে অনলাইনে পান আলু বীজ সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে ৯ শতক জমিতে চাষাবাদ করেন। স্বল্প শ্রম আর খরচে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিটি আলুর ওজন ২৫০ গ্রামের চেয়েও বেশি হয়েছে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে তিনি পান আলু বিক্রি করা শুরু করেছেন। প্রতিকেজির বাজারমূল্য ৮০ টাকা হারে পাচ্ছেন জানিয়ে এই চাষাবাদে কৃষক রফিক অনেক খুশি বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই আলু চাষাবাদের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছুতেই এর বীজ পাচ্ছিলাম না। অবশেষে অনলাইনের সাহায্যে বীজ সংগ্রহ করে লাগানোর পর এখন খুব ভালো ফলন এসেছে। আমার দেখাদেখি আশেপাশের কৃষকরাও এই চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমি তাদের বীজ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবো বলে জানিয়েছি। এখন আলুর ফলন আসার পর মাচার নিচে মিস্টি কুমড়া ও হাইব্রিড জাতের মরিচগাছ লাগিয়েছি।’পদুয়ায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পল্লবী চক্রবর্তী বলেন, ‘কৃষক রফিক উদ্দিন অনেক আগে থেকেই এই আবাদের কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু নামটা বলতে না পারায় তাকে অনেক জাতের আলুর বীজ দিয়েছিলাম। কিন্তু লতা আলু বলার পর তাকে অনলাইনে বীজ কিনতে সহায়তা করেছি। বীজ লাগানো থেকে পরিচর্যা সবক্ষেত্রে তাকে পরামর্শ দিয়েছি। তার ফলন দেখে অন্যরাও এই চাষাবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করছেন।’

জানা যায়, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ পান আলু গাছ, বাড়ির আঙ্গিনা ও ঝোপঝাড়ে বেড়ে উঠতো। মানুষের ভূমির চাহিদা বাড়ায় পুষ্টিগুণে ভরা এই লতা আলু এখন বিলুপ্তির পথে। এই আলু চাষের জন্য আলাদা জমি, সার ও বাড়তি যত্নের তেমন প্রয়োজন হয় না। জমিতে মাচা তৈরি করে কুমড়া, চিচিঙ্গা ও ঝিঙা ফসনের সাথেই এটি রোপন করা যায়। এই আলু চাষাবাদ করতে একর প্রতি ২০২৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। যেখানে অন্য আলু আবাদ করতে লাগে ৫০৬০ হাজার টাকা। এর বাইরেও এই আলুটির ফলনও অনেক বেশি হয়। এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার অধিকাংশ মাটি দোঁআশ ও বেলেদোঁআশ হওয়ায় এবং উপযোগী পরিবেশ থাকায় পান বা গাছ আলু আবাদ করা সম্ভব। খরচ কম এবং কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় এই আলু চাষে কৃষকদের অবহিত করা গেলে এটি ব্যাপক আকারে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘কৃষক রফিক উদ্দিন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই চাষাবাদ শুরু করলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও অনেকে বসতবাড়ির আঙিনায় এটি লাগিয়েছেন। এই আলু বেশ সুস্বাদু, পুষ্টিকর। রাঙ্গুনিয়ায় এই আবাদ বাড়াতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন কারিকুলামের দেড় কোটি বই আসছে চট্টগ্রামে
পরবর্তী নিবন্ধদুর্গাপূজা উপলক্ষে র‌্যাবের বিশেষ চেকপোস্ট ও রোবাস্ট পেট্রোলিং