রাঙ্গুনিয়ায় একসময় মরিচ ছাড়া অন্য কোনো মসলা জাতীয় ফলন চাষে আগ্রহী ছিলেন না কৃষকরা। কিন্তু কৃষি অফিসের প্রদর্শনী প্লট, প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। গেল কয়েকবছর ধরে পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ায় এ চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত বছর হেক্টর প্রতি ৮ থেকে ১২ টন ফলন পাওয়া গিয়েছিল। এবারও ভালো ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আগে সামান্য কিছু জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করলেও ২০২১–২২ সালের পর থেকে রাঙ্গুনিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু হয়। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ধান ও সবজি চাষের পাশাপাশি দিন দিন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। কৃষকরা সবজি চাষের পাশাপাশি পেঁয়াজ আবাদ করে লাভের প্রত্যাশা করছেন। গতবছর ৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল। এবার আবাদ বেড়ে ৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এজন্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ১০ জন কৃষককে প্রণোদনা বীজ ও সার দেয়া হয়েছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কৃষকরা জানান, তারা ডিসেম্বরের দিকে বীজতলা তৈরি করেছিল। জানুয়ারি থেকে মাঠে আবাদ শুরু করে। বর্তমানে ফলন এসেছে এবং চলতি মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করা যাবে। স্বল্প পুঁজিতে কম সময়ে পেঁয়াজ চাষ করে ঘরে তোলা যায়। পাশাপাশি সারাবছরই চাহিদা থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়া যাওয়ায় এই চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ওঠেছেন। তবে সরকারিভাবে এই চাষে প্রণোদনা কম। তাই খাতে অগ্রাধিকার দেয়ার আহবান জানান কৃষকরা।
পৌরসভার রাঙ্গুনিয়া গ্রামের কৃষক মুফিজুল হক জানান, গত বছর আমি ১ একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম এবং ১ লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছিল। এবারও একই পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছি। আশা করছি ভালো ফলন পাবো। অপর পেঁয়াজ চাষি আবদুল হাকিম বলেন, গত বছর ৪ শতক জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে ভালো দাম পেয়েছি। এবার ৫ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। কেমন লাভ হবে বলতে পারছি না।
ইছাখালী জাকিরাবাদ এলাকার আবদুর কাদের বলেন, বিভিন্নরকম সবজি আবাদের পাশাপাশি পেঁয়াজ আবাদ করেছি। ভালোই কলি দেখা যাচ্ছে। রমজানে কিছু কিছু পেঁয়াজ তুলে ঘরে খাচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো উঠবে আশা করি। তখন বাজারজাত করবো। আশাকরি ভালোই উপার্জন হবে।
পেঁয়াজ চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য ফসলের জন্য যেভাবে প্রণোদনা দেয়া হয় সেভাবে যদি পেঁয়াজের জন্যেও দেয়া হতো, তবে কৃষকরা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করতো। এতে রাঙ্গুনিয়ার পেঁয়াজ আমদানি না করে নিজেদের উৎপাদন দিয়েই চাহিদা পূরণ করা যেতো।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, পেঁয়াজ চাষের জন্য যে উপযোগী পরিবেশ কিংবা মাটি দরকার তা আমাদের নেই। তারপরও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেক কৃষক বিভিন্ন সবজির ফাঁকে পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন। যা তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে কাজে লাগে। পেঁয়াজকে সাধারণত ঠাণ্ডা জলবায়ু উপযোগী ফসল বলা হয়। বর্তমানে গ্রীষ্মকালেও এই ফসলের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিসের কর্মতৎপরতায় রাঙ্গুনিয়ায় দিন দিন পেঁয়াজ আবাদ বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও আবাদ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।