রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি, মাইকিং তবুও সরছে না মানুষ

টানা বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গেল কয়েকদিনের টানা বর্ষণে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে থাকা বাসিন্দাদের দুর্ঘটনা এড়াতে সরে যেতে মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস।

এরপরও বাসিন্দারা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রেখেছে। তাই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রোধে দায় সারা মাইকিং না করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থেমে থেমে বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ায় রাঙ্গুনিয়ার একাধিক স্পটে বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ পড়েছে। এতে ছিড়ে গেছে তার। উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্পটে বিধ্বস্ত হয়েছে একাধিক খুঁটি। অনেকের বসতঘরে ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক মিটার। এতে সকাল থেকেই রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড়ি এলাকায় ছোট ছোট ধসের খবর পাওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের রাঙ্গুনিয়া অফিসের এজিএম খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে সকাল থেকেই বৈদ্যুতিক লাইন, খুঁটি ও মিটার ভাঙার খবর আসছে। আমরা এসব সারিয়ে লাইন চালু করতেই ফের বিপর্যয় হচ্ছে। তাই লাইন চালু করা যাচ্ছে না। বৈরী পরিস্থিতিতেও আমাদের লোকজন সঞ্চালন লাইন স্বাভাবিক করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে গেল কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু এলাকায় পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে মাইকিং করেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ৯ হাজার একর সরকারি ও ১৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি ও পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ে প্রায় দশ হাজার বসতঘর রয়েছে। এর মধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। প্রতিবছর ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে একাধিক বসতঘর মাটি চাপা পড়ে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের দুই পরিবারের ২২ জনসহ পাহাড় ধসে প্রাণ হারিয়েছেন। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড় কাটার সময় মাটি চাপা পড়ে এক শিশুসহ ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন শাহ বলেন, ‘পাহাড়ে থাকা বাসিন্দারা নিম্ন আয়ের মানুষ। থাকার জায়গাটুকু ছাড়া তাদের আর কোন সম্পদ নেই। তাই মাইকিং কিংবা সতর্ক করেও তাদের অন্যত্র নেওয়া যায় না। তাই পাহাড়ের বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিতে এবং সারাবছর পাহাড় কাটা বন্ধে টেকসই উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পাহাড় ছাড়তে মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপরও বসবাসকারীরা স্বেচ্ছায় সরে না এলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী এতগুলো পরিবারকে পুনর্বাসন করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এই বিষয়ে উচ্চ মহলে আলোচনা চলছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ভাবিকে হত্যার দায়ে দেবরের যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত