পাটকে বলা হয় বাংলাদেশের সোনালী আঁশ। রাঙ্গুনিয়ায় সেই পাট থেকে উৎপাদিত সুতা বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর থেকে শুধুমাত্র গেল বছরেই আয় হয়েছে সাড়ে ৮৫ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। ভবিষ্যতে পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের প্রাচীনতম শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী জুটমিল থেকে এই সুতা উৎপাদিত হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড রাষ্ট্র্ায়ত্ব বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনস্থ ২৬টি মিল এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রধান পাটকল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে এটি ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে বরাদ্দ পায় ইউনিটেঙ গ্রুপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে এক হাজারের উপর শ্রমিক। যেখানে দুটি শিফটে দৈনিক ৩০ টনেরও বেশি জুট থেকে সুতা উৎপাদিত হয়। যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুর্কি, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বেসরকারি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মিলে সুতা তৈরির জন্য চলছে বিভিন্ন ধরনের কর্মযজ্ঞ। ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাট আনা হচ্ছে। কিছু শ্রমিক সেই পাটগুলো নামাচ্ছেন আবার কেউ কেউ পাটকে গ্রেড ভিত্তিক ভাগ করে পরিমাপ অনুযায়ী কেটে নিচ্ছেন। সেখান থেকে পাটগুলো ভ্যানে করে মূল মিলে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তারপর নানান প্রক্রিয়া শেষে সুতা তৈরির নানা কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে সহস্রাধিক নারী–পুরুষ শ্রমিকদের। শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সময় বেকার ছিলাম। সংসারে চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। জুটমিল নতুন করে চালু হওয়ায় সংসার চলছে।
জুটমিলের প্রশাসন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন বলেন, সরকারকে মাসিক নির্ধারিত হারে ভাড়া দিয়ে এই মিলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি আমরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মিলের স্থাপনাগুলো ৫০/৬০ বছরের পুরোনো হওয়ায় ছাদ নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে, কর্ণফুলী পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে শ্রমিক কলোনি, সীমানাপ্রাচীর এমনকি বহুতল বিশিষ্ট অফিসার্স ভবন ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।