রাঙ্গুনিয়ায় প্রশাসনের একাধিক অভিযানের পরও পাহাড় ও কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট করে চালায় মাটি কাটার কার্যক্রম। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও থেমে নেই ভূমিদস্যুদের তৎপরতা। মূলত অবৈধ ইটভাটা, পুকুর বা ফসলি জমি ভরাট করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মাটি। ফলে সাবাড় হচ্ছে পাহাড়, নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
জানা যায়, উপজেলার রাজানগর, ইসলামপুর, সরফভাটা, দক্ষিণ রাজানগর, পারুয়া, কোদালা, পোমরা, লালানগর, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের একাধিক স্পটে চলছে সমানতালে পাহাড় কাটা ও কৃষি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। এর মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা ইসলামপুর, রাজানগর ও দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নে। এখানে এক প্রকার প্রকাশ্যে কাটা হয় পাহাড় ও ফসলি জমি। সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় অধ্যুষিত এই গ্রামের প্রত্যেক পাড়ায় বিপজ্জনকভাবে কাটা হয়েছে পাহাড়। একটি পাহাড় কেটে এর গোড়ায় বড় গর্ত করে ফেলা হয়েছে। কিছুদূর গেলেই দেখা যায়, বিশালাকার কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ফেলা হয়েছে। এলাকার গলাচিপা এলাকায় বনবিভাগের মালিকানাধীন একাধিক পাহাড় খাঁড়াভাবে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এই পাহাড়গুলোর উপরে–নিচে বিপজ্জনকভাবে বসবাস করছে সাধারণ মানুষ। এই এলাকায় কয়েক বছর আগে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। এবারও চলমান বৃষ্টিতে এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ছাড়া কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা। কর্তনকারীরা প্রভাবশালী। তাদের ভয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস করে না। এমনকি বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেও এক্ষেত্রে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
স্থানীয় জনসাধারণ জানান, পাহাড় ও ফসলি জমি কাটতে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেয় এসব দস্যু। বিভিন্ন এলাকায় ৮/১০ জনের একেকটি সিন্ডিকেট প্রথমে জমির মালিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কিছু জমি টার্গেট করে। পরে সেটিকে এস্কেভেটরের মাধ্যমে গভীর করে খনন করে মাটিগুলো বাইরে বিক্রি করে। গভীর খাদের ফলে একটু বৃষ্টিতেই আশপাশের বাকি জমিগুলো ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। যার ফলে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাকিরাও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করে দেয় তাদের কাছে। এক পর্যায়ে পুরো বিলে এসব ভূমিদস্যুর থাবা বসে।
দক্ষিণ রাজানগরের মোহাম্মদপুর মসজিদ ফেলে কিছুটা অতিক্রম করলে এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে খোলা স্থানে রাস্তার পশ্চিম পাশে দুটি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটা দুটির আশপাশে ফসলি জমিগুলো খননযন্ত্র দিয়ে ২০–৪০ ফুট গভীর করে কাটা হয়েছে। এই এলাকায় উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কয়েক লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেয়। কিন্তু বন্ধ হয়নি ফসলি জমি কাটা। এতে শুধুমাত্র ফসলি জমি নয়, আশপাশের অনেক সামাজিক স্থাপনাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ইতিমধ্যে একাধিক অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ মাটি কাটার এস্কেভেটর নষ্ট করেছি। সম্প্রতি দক্ষিণ রাজানগরে অভিযান চালিয়ে একটি এস্কেভেটর নষ্ট করা হয়েছে। এসব চক্র প্রশাসনের লোক দেখলে পালিয়ে যায়। যার ফলে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।