রাঙামাটি পৌর নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে মধ্যরাতে, রবিবার ভোট

বিজয় ধর, রাঙামাটি | শুক্রবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:১৩ অপরাহ্ণ

আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে চতুুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা।
পৌর নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী প্রচারণায় সরব পার্বত্য পর্যটন শহর রাঙামাটি।
মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে পর্যটন শহর হিসাবে রাঙামাটিকে আধুনিক শহরে গড়ে তোলার। আধুনিকায়ন করে রাঙামাটির উন্নয়ন ঘটানোর আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা।
আগামী রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ৪র্থ ধাপের রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৫ জন। তারা হলেন বর্তমান মেয়র ও জেলা যুবলীগের সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সদর থানা বিএনপির সভাপতি ধানের শীষ প্রতীকের অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা জাতীয় পার্টির নেতা প্রজেস চাকমা ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আব্দুল মান্নান রানা ‘কোদাল’ প্রতীকে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত ‘মোবাইল’ প্রতীকের অমর কুমার দে।
তবে মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুনের মধ্যে।
দুইজন প্রার্থীই সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট চাইছেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠের প্রচারণায় এগিয়ে আছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
এছাড়াও কাউন্সিলার পদে ৪১ জন পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯ জন প্রার্থী।
এদিকে, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী বলছেন, “রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধস ও করোনা ভাইরাসের কারণে রাঙামাটি পৌরসভার পুরো উন্নয়ন কাজ শেষ করতে পারিনি। আগামীতে নির্বাচিত হলে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করব এবং রাঙামাটিকে মাদকমুক্ত করব।”
অপরদিকে, বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন বলছেন,“বিগত দিনের মতো রাঙামাটিতে যদি কেন্দ্র দখল না হয় তাহলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। বহিরাগতরা যাতে রাঙামাটিতে প্রবেশ করে সেন্টার দখল করতে না পারে সেই ব্যাপারে আমি জেলা নির্বাচন অফিসকে জানিয়েছি।”
এদিকে, রাঙামাটি পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “বিগত ৫ বছরে আমি এ ওয়ার্ডের ২১টি এলাকায় উন্নয়ন করেছি। করোনা মহামারীতেও আমি মানুষের পাশে ছিলাম । তাই আশা করছি এ এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে আবারও জয়যুক্ত করবেন।”
৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী রবিউল আলম রবি বলেন, “২০০৪ এবং ২০১১ সালে আমি এ ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হই। আমি দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় চেষ্টা করেছি এলাকার সাধারণ মানুষকে সার্বিক সেবা দিয়ে সহযোগিতা করার। আমি মনে করি এ এলাকার জনগণ আমাকে আবারও নির্বাচিত করে জনগণের সেবা করা সুযোগ করে দিবেন।”
অপরদিকে, সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জয়শ্রী দে জয়া বলেন, “অসহায়, দুঃস্থ ও বৃদ্ধ মহিলাদের কল্যাণে আমি কাজ করে যাব এবং পৌরসভায় যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা এ ওয়ার্ডের জনগণের কাছে বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।”
অপরদিকে, রাঙামাটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ। এ নিয়ে ভোটার এবং প্রার্থী সবার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে উৎকন্ঠা ও উচ্ছাসও।
নতুন এই ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। আজ শুক্রবার মক ভোটে অংশ নিয়ে অনেকেই নিশ্চিত হয়ে নিয়েছেন ভোটের পদ্ধতি সম্পর্কে।
আইনশৃংখলাবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ জন পুলিশ, ৯ জন আনসার সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
পাশাপাশি পুলিশের ১১টি মোবাইল টিম এবং ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নির্বাচনে যেকোনো সংঘাত সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করবে এদিন। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব ও বিজিবি’র সদস্যরাও পুরো পৌর শহরে টহল দেবেন সারাদিন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল টিম নির্বাচনের দিন পৌর এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে তিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দুইজন এসিল্যান্ডও আছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতিই নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ বলেন, “রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখানে পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন।”
এদিকে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার মো. শফিকুর রহমান বলেন, “রাঙামাটির ৪র্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাঙামাটি পৌর এলাকার ৩১টি ভোট কেন্দ্রে ৬২ হাজার ৯১৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৪ হাজার ২৪২ এবং মহিলা ভোটার ২৮ হাজার ৬৭১।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনয় মাস পর দেশে ফিরে গ্রেপ্তার, তারপর জামিন
পরবর্তী নিবন্ধমেজবান খেয়ে বাড়ি ফেরা হলো না মনোয়ারার