রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীতে মারা যাওয়া সেই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে কার্ডিয়াক স্ট্রোকেই। হাতির ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এটিই উঠেছে এসেছে বলে জানিয়েছেন পশু বিশেষজ্ঞরা।
হাতির মৃত্যুর পরে অবশ্য প্রাথমিকভাবে স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন বন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। ময়নাতদন্তের পর প্রকাশিত রিপোর্টে অবশেষে সেই সত্য মিলেছে।
হাতির মৃতুর কারণ নিশ্চিত করে কাপ্তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. এনামুল হক হাজারী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা যখন হাতির গায়ে কোনো ধরণের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাইনি। তখন রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই ইকো-পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনরাসহ সার্বিকভাবে দেখলাম মৃত্যুর কারণ স্ট্রোক হতে পারে। হাতির বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করে ময়নাতদন্ত শেষে দেখা গেছে হাতিটির মৃত্যু কার্ডিয়াক স্ট্রোকেই হয়েছে।’
এই পশু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, সাধারণত একটি হাতির ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৪ টনের মতো। এরা প্রতিদিন যে খাদ্য খায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে এখন এত খাদ্য পায় না হাতি। বনে খাদ্য ঘাটতির প্রভাব আর গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে হাতিটির স্ট্রোক হতে পারে।
বনের ফুসফুস হলো গাছপালা কিন্তু দিন দিন বৃক্ষ নিধন বাড়ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলো বাহিরে থেকে ঘন সমৃদ্ধ বন দেখালেও ভেতরে তেমন গাছপালা না থাকায় হাতি খাদ্য ঘাটতিতে ভুগে। খাদ্য ঘাটতির কারণে হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। এতে করে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আরও বিপন্ন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টার দিকে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মতিপাড়া কাঁঠালতলী এলাকায় বুনো হাতিটিকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে ওইদিনই হাতির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় জিডি ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে মাটি চাপা দিয়েছিল বন বিভাগ। মৃত এশিয়ান নারী হাতিটির আনুমানিক বয়স ৩০ বছর বলে জানিয়েছেন বন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। একটি হাতির আয়ুষ্কাল ৬০-৭০ বছর হলেও এই হাতিটি মারা গিয়েছে আয়ুষ্কালের অর্ধেক সময়ের মধ্যেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে রাঙামাটির সদর উপজেলার জীবতলীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুইটি বুনো হাতির মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৫ সালের পর রাঙামাটিতে চলতি বছরের ১২ অক্টোবর জেলার কাপ্তাইয়ে আরও একটি বুনো হাতির মৃত্যু হলো স্ট্রোকে। ২০১৫ সালের পর থেকে বিগত দিনে রাঙামাটিতে হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও হাতির আক্রমণে অনেকেই মারা গিয়েছেন। রাঙামাটি জেলার মধ্যে কাপ্তাই, রাজস্থলী, বরকল, লংগদু উপজেলা এবং সদর উপজেলার জীবতলী এলাকায় মাঝেমধ্যে এশীয় বুনো হাতির দেখা মিলে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজাড়ের ফলে সৃষ্ট খাদ্য সংকট, হাতির চলাচলের করিডোরে মানুষের উপস্থিতি ও বসতি গড়ে তোলার ফলে হাতি-মানুষ মুখোমুখি হচ্ছে। হাতি-মানুষের এই দ্বন্দ্বের কারণে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে হাতির আক্রমণে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে হাতির আবাসস্থল নিরাপদ ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বন বিভাগের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলছেন পরিবেশকর্মীরা।
তবে উপ-বন সংরক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে তেমন খাদ্য ঘাটতি নেই। ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘একটি হাতি প্রতিদিন গড়ে ১৬০-১৮০ কেজি খাবার খেয়ে থাকে। কেবল কলা গাছ-ই নয়; বাঁশসহ হাতির খাবার যোগ্য প্রায় শত প্রজাতির বৃক্ষ, লতা-পাতা রয়েছে। তবে ড্রাই সিজনে (শুষ্ক মৌসুমে) পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে খরায় প্রভাবে হাতি লোকালয়ে চলে আসে খাবারের সন্ধানে।’