রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো নীরব-নিস্তব্ধ

করোনায় ঈদের ছুটি

বিজয় ধর, রাঙামাটি | শুক্রবার , ১৪ মে, ২০২১ at ৯:০০ অপরাহ্ণ

ঈদের ছুটিতে করোনার কারণে রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে। যেখানে এই ঈদের মৌসুমে রাঙামাটির পর্যটন ঝুলন্ত ব্রিজ, প্রকৃতির ভূ-স্বর্গখ্যাত সাজেক ভ্যালী, পুলিশ পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক পিকনিক স্পট, ডিসির বাংলো সহ সবকটি পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট থাকে সেখানে মহামারী করোনার কারণে রাঙামাটি জেলার সব পর্যটন স্পট গত ৩১ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছেন পযটন ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। আয়-রোজগার না থাকায় অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
বাঘাইছড়ির সাজেকের শান্তি ছায়া ও মেঘের পালকি রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন আজাদীকে বলেন, “করোনায় গত ঈদের সময়েও এবং এবার ঈদেও আমাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। এই ঈদের মৌসুমে সাজেকে প্রায় ১০০-১৫০টি জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজারো পর্যটক সাজেক বেড়াতে আসতেন। এতে আমাদের দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যবসা হতো কিন্তু এখন কিছুই নেই।”
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ইউপি সচিব বিশ্বজিৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, “প্রতি বছর ঈদের দিন থেকে শুরু করে সপ্তাহব্যাপী সাজেকে পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাজেকের অপরুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে আসেন কিন্তু গত বছর এবং এবারও করোনা মহামারীতে সরকারি নির্দেশনার কারণে পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকায় কোনো পর্যটক সাজেক ভ্রমণ করতে পারছেন না। এতে করে পর্যটক এবং সাজেকের ব্যবসায়ীরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।”
রাঙামাটি পর্যটন সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসা। গত ৩১ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ায় এখানকার রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খালি পড়ে আছে।
এদিকে, রাঙামাটির স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মেজবাহ উদ্দিন ও মো. হান্নান জানান, তারা রাঙামাটিতে বসবাস করলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে পরিবার নিয়ে কোথাও তেমন ঘোরাঘুরি হয় না। প্রতি বছর ঈদের সময় চেষ্টা করেন পরিবারের সকলকে নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে আসতে কিন্তু করোনার কারণে এই ঈদের দিনে বাসায় বসে ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার হোটেল মতিমহলের সত্ত্বাধিকারী শফিউল আজম বলেন, “গত দেড় মাস ধরে আমরা আর্থিকভাবে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। করোনার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় রাঙামাটিতে কোনো পর্যটক আসছে না। এর ফলে প্রায় দুই মাস ধরে কয়েক লক্ষ টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।”
প্রায় দুই মাস ধরে রাঙামাটি একেবারে পর্যটকশূন্য। ফলে পর্যটনের সাথে জড়িত নৌ পরিবহন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মারাত্মক ধস নেমেছে। করোনার দাপটে লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। লকডাউনে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরাও ।
এই মৌসুমে মাসের পর মাস ব্যবসা বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে তাদের। একইভাবে করোনায় ভাটা পড়েছে রাঙামাটির হোটেল-মোটেল ব্যবসায়। ফের ব্যবসা দাঁড় করাবেন কীভাবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা। সেই অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।
রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকার স্থানীয় টেক্সটাইল কাপড় ব্যবসায়ী অনুপম ত্রিপুরা বলেন, “প্রতি বছর ঈদে রাঙামাটিতে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন। এতে আমাদের অনেক বেচাকেনা হয় কিন্তু দুই বছর ধরে ঈদের মৌসুমে আমাদের ব্যবসা নেই বললেই চলে।”
রাঙামাটি পর্যটন নৌ ঘাট-এর ম্যানেজার রমজান আলী বলেন, “কারোনার কারণে পর্যটন নৌ ঘাটের সকল নৌযান শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গতবার কারোনাকালীন লকডাউনের সময় সরকারি কিছু অনুদান পেলেও এবার কোনো সহায়তা কারো কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত পাইনি।”
তিনি বলেন, “পর্যটন ঘাটের বেশ কয়েকজন বোটচালক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি আবাসিক হোটেল বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, “প্রায় দুই মাস ধরে রাঙামাটির সব হোটেল-মোটেল ও টুরিস্ট বোট বন্ধ রয়েছে। এতে করে আমাদের অনেক র্কমচারীকে বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি দিতে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গত বছর করেনাকালীন সময়ে সরকারিভাবে বেশ কিছু সহায়তা পেলেও এবার এখনও কোনো কিছু পাইনি। পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় কয়েকশ’ কোটির টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”
এদিকে, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, “করোনার মহামারীর কারণে রাঙামাটির পুলিশ পলওয়েল পার্কসহ সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। যাতে করে আজকে ঈদের দিনেও কোনো পর্যটক টুরিস্ট স্পটগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে।”
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, “লকডাউনের পর থেকে রাঙামাটি পর্যটন কার্যক্রমশূন্য অবস্থায় রয়েছে। আজকের এই ঈদের দিনে রাঙামাটি পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুতে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু করোনায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের অনেক কর্মচারী আর্থিক সংকটে আছে। এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। পর্যটন বন্ধ থাকায় আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।”
তিনি বলেন, “পর্যটন বন্ধ থাকায় আমাদের প্রতি মাসে ৩৫ লক্ষ টাকার লোকসান হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে কখন উত্তরণ ঘটবে তার কোনো দিনক্ষণ জানা নেই।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈ‌দের দি‌নে লোকে লোকারণ্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
পরবর্তী নিবন্ধমিতু হত্যার মোটিভ জানতে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পিবিআই