পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটি জেলা শহরের উপকণ্ঠ প্রবেশমুখ মানিকছড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে যানবাহন। জেলা শহরের প্রবেশ ও বাহিরের জন্য একমাত্র প্রধান সড়ক হওয়ার কারণে মানিকছড়ি পাহাড় বেয়েই জেলা শহরে প্রবেশ ও বের হতে হয় সব ধরনের যানবাহনকে। মানিকছড়ি তিন রাস্তার মুখ ট্রাফিক মোড় থেকে প্রায় ভেদভেদী রূপনগর পর্যন্ত দীর্ঘ খাড়া পাহাড়ি সড়কটি বেয়ে উঠা লাগে। বিভিন্ন সময়ে মালবাহী গাড়িসহ অন্যান্য যানবাহন এই সড়কে বেয়ে উঠতে বেগ পাচ্ছে। অনেকাংশেই সড়কের মাঝখানে আটকে যাচ্ছে। পরবর্তীতে গাড়ির মালামাল সরিয়ে যানবাহনগুলোকে উদ্ধার করতে হয়। আবার বিভিন্ন সময়ে নামার পথে দ্রুতগতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানিয়েছে, ঝুঁকির বিষয়টি তারা অবগত আছেন। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে তারা ভাবছেন।
স্থানীয়রা ও সড়কে যাতায়াতকারী গাড়িচালকরা জানান, রাঙামাটি জেলা শহর চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি–বান্দরবানের যাতায়াতের জন্য প্রধান সড়ক এটি। জেলা শহরের উপকন্ঠের মানিকছড়ি পাহাড় পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এ সড়কে চলাচল যাত্রী, জনসাধারণ ও পরিবহনগুলোকে। ঝুঁকির তুলনায় অপ্রশস্ত সড়ক ও বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে মানিকছড়ি পাহাড় পাড়ি দিয়ে হয়। সড়কের ঝুঁকি ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ মে জেলা শহরের উপকণ্ঠ মানিকছড়ি পাহাড়ে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে সাজেদা আক্তার নামে এক নারীর মৃত্যু হয়, এ ঘটনায় আহত হন আরও ১৯ জন। ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট মানিকছড়ি পাহাড় দিয়ে একটি যাত্রীবাহী পাহাড়িকা বাস নামার পথে মোটর–সাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে মো. সাহেদ নামে এক মোটর–সাইকেল আরোহী মৃত্যু হয়, এ ঘটনায় আহত হন আরও দুই মোটর–সাইকেল আরোহী। ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর মানিকছড়ি পাহাড়ে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়, এ ঘটনায় বাসে থাকা ১৬ যাত্রী আহত হন। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ পাঁচজন আহত হন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মানিকছড়ি পাহাড়ে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সময়ে প্রায়শই ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ি জনপদের এসব সড়ক তৈরি করা হয়েছিল অনেকাংশেই পাহাড় কেটে। যে কারণে পাহাড় কেটে সড়ক তৈরির ফলে খাড়া পাহাড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। অন্যদিকে অপ্রশস্ত ও খাড়া সড়কের কারণে সড়কে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিবেশগত ভারসাম্য রেখে খাড়া পাহাড়ের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এছাড়া বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা করা গেলে রাঙামাটি শহরের মানুষ ও পর্যটকদের সড়কে যাতায়াত ব্যবস্থায় ঝুঁকি কমে আসবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক–সুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার আজাদীকে বলেন, রাঙামাটি শহর, রাঙামাটি–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ খাগড়াছড়ি–বান্দরবান সড়কের সঙ্গে যাতায়াতের যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর রাঙামাটি শহরের উপকণ্ঠ মানিকছড়ি পাহাড়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে করে ক্রমাগত প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনাও বাড়ছে। এই সড়কটি ঝুঁকি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দেশের প্রাচীন ১৯টি জেলার মধ্যে একটি জেলা হলো রাঙামাটি। বিশেষত পাহাড়ি জনপদ যখন এসব এলাকায় সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে বেশিরভাগ পাহাড় কেটে। যে কারণে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকায় রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। এখন যদি সড়কটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয় দেখা গেছে পাহাড় কাটার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় মানিকছড়ি পাহাড়ের ঝুঁকি নিরসনে সরকারকে মহৎ অর্থবিনিয়োগ করে হলেও সড়কটি নিরাপদ করা খুব দরকার।
সওজ রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা আজাদীকে বলেন, মানিকছড়ির ঝুঁকি নিয়ে সড়ক বিভাগের স্বল্প মেয়াদি কোনো উদ্যোগ আপাতত নেই। সড়কটি মোটামুটি প্রশস্ত থাকলেও দীর্ঘ পাহাড় বেয়ে উঠা–নামার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পরিবহনগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের রাঙামাটি–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাকি অংশের চারলেনের সড়ক তৈরির যে সম্ভাবতা যাচাই চলছে, সেখানে কনসালটেন্ট এ ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।