পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শুক্রবার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় পৌর এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি প্রত্যাহারের কথা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহামম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পৌরসভা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় রোববার বেলা ১১টা থেকে থেকে রাঙামাটি পৌরসভা এলাকায় জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাগার করলাম।
জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও রাঙামাটিতে পরিবহন মালিকদের পরিবহন ধর্মঘট ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সমর্থনে ৭২ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ বলবৎ আছে। এতে আজ রোববারও রাঙামাটি শহরে অভ্যন্তরীণ একমাত্র যানবাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে না। বন্ধ আছে দূরপাল্লার যানবাহন ও কাপ্তাই হ্রদে লঞ্চ চলাচল।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাঙামাটি জেলা শহরে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ, বিহার পরিদর্শন করেছে প্রশাসন। এসময় রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, শহরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর শুক্রবার দুপুর থেকে রাঙামাটি শহরে মানুষের উপস্থিতি কমে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ খুব একটা বের হননি। শনিবারের তুলনায় রোববার সকাল থেকে শহরের বনরূপা বাজার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে। কিছু দোকানপাটও খুলছে।
এর আগে, শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন।
এদিকে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও চারজন নিহতের ঘটনায় সরকারঘোষিত ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি’তে জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
রোববার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নতুন কুমার চাকমা বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ছাড়া অন্য কোনো তদন্ত কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইউপিডিএফ নেতা বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে সংঘটিত হত্যাক-সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হলে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে তা সম্ভব না হওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে যুক্ত করা না হলে তা হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক ও অপরাধীদের দায় মুক্তি দেয়ার সামিল।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় জনসংহতি সমিতি
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি’ বর্বরোচিত হামলার ঘটনা বার বার ঘটিয়ে ফায়দা লুটছে বলে মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবি জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।