খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় সহিংসতার ঘটনার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় সরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের হিসাবে, ভান্ডবে ঘটনায় মোট ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনার কারণ উদঘাটনে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। গত বৃহস্পতিবার গঠন করা তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর সরেজমিন পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সহিংসতার ঘটনায় রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে একটি কোর কমিটি গঠন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। কমিটির হিসাবে ৯ কোটি ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবন ও গাড়ি রাখার গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ, জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অস্থায়ী কার্যালয়ের ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভবনে রাখা ৯টি গাড়ি, ৮টি ব্যাংকে ভাঙচুর, বনরুপা বাজারে একটি মাইক্রোবাস, কালিন্দীপুরে ১টি নোহা গাড়ি ও ২টি মাইক্রোবাস, ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ৮টিতে ভাংচুর, ৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর, ৬টি ট্রাক, ৩টি বাসে ভাঙচুর, ২টি টু স্টোক (বেবি টেক্সি) গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া ১৮টি বসতবাড়ি, ৮৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগ, ৮৫টি ভাসমান দোকানে ভাঙচুর–অগ্নিসংযোগ, ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাঙচুর, একটি মসজিদ ও অপর একটি বৌদ্ধ বিহারে ভাঙচুর ও একটি আবসবাপত্র দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়ে দেওয়া মোটরসাইকেলের মধ্যে তিনজন সাংবাদিকের গাড়িও রয়েছে।
এদিকে, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকালে রাঙামাটি জেলা শহরের বনরূপা কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহার এলাকা থেকে বিজন সরণী এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান–দোকান, বসতঘরে তাণ্ডব চালানোর ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানের সবগুলো এখনো চালু করা যায়নি। বেশিরভাগই পোড়া অবস্থায় পড়ে আছে। কোনোটাতে চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ।
রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, সহিংসতার ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়। মালামালের ক্ষতির পরিমাণের তালিকা মন্ত্রনালয়ের পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি : সহিংসতার কারণ খুঁজতে গঠিত তদন্ত কমিটিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরল্লাহ নূরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সই করা অফিস আদেশে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান; ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিতকরণ এবং ভবিষ্যতে একই জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণ সদস্য হিসেবে আছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর সরেজমিন পরিদর্শন ও তদন্তপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এর আগে, গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাঙামাটি শহরে সহিংসতার ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুরে রাঙামাটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিশিষ্টজন ও সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের একটি ‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।