পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও সাধারণ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলা শহরের বনরুপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সীমা চাকমা।
এছাড়া জেলার দশ উপজেলায় মোট ৩০ হাজার ৫৩৪ জন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে শতভাগ মাতৃভাষা বই বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিইও)। এদিকে নতুন বছরে নিজেদের মাতৃভাষা বই পেয়ে উচ্ছ্বাসিত পাহাড়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভাষায় বই পেয়েছে এতে আমরাও অনেক খুশি। কিন্তু স্কুলগুলোতে এখনো ভালো করে পড়ানোর শিক্ষক নেই। নিজেদের মাতৃভাষা শিক্ষার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অভিভাবকরাও অনেকেই আমাদের মাতৃভাষাটা ঠিকমতো বলতে এবং লিখতে পারি না, তাই এটা শেখার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৭ সাল থেকে প্রথমবারের মতো পাঁচটি জাতির মাতৃভাষায় বই বিতরণ শুরু করে সরকার। তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজ ভাষার বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রথমবার প্রাক–প্রাথমিক দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে বই। এরমধ্যে প্রাক–প্রাথমিকে দুইটি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী তিনটি এবং তৃতীয় শ্রেণীতে একটি করে বই পাচ্ছে পাহাড়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা
রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস (ডিপিইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জেলার দশ উপজেলায় ৩০ হাজার ৫৩৪ জন চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৯ হাজার ২২১ টি বই বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রাক–প্রাথমিকে ৭ হাজার ৬৩৫ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৭ হাজার ৬১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৭ হাজার ৯১৬ ও তৃতীয় শ্রেণীতে ৭ হাজার ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
অন্যদিকে, জেলায় প্রাক–প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট বইয়ের চাহিদা ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৬টি। এরমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর বই পাওয়া গেছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৪৮টি বই। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর কোনো বই আসেনি রাঙামাটি জেলায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেষ শীল বলেন, পার্বত্য জেলার জন্য মাতৃভাষার যে বইগুলো সরকার চালু করেছে সেই বইগুলো শতভাগ আমাদের কাছে চলে এসেছে। বইগুলো আমরা স্ব স্ব বিদ্যালয়েও পৌঁছে দিয়েছি। গত মঙ্গলবার পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের সহায়তায় পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষা শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে স্ব স্ব মাতৃভাষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু করেছি এবং ইতোমধ্যে প্রায় শেষেরদিকে। প্রশিক্ষণটি শেষ হলে আমরা পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের নিজেদের মাতৃভাষার পাঠদানটি শুরু করতে পারব।