রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় বাঘ সদৃশ এক বন্যপ্রাণীর আক্রমণে এক কাঠুরে গুরুতর আহতের খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার ভোরে জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম মৈদং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৌন আদাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৈদং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আহত রাঙা চোগা চাকমা (৩৫) মৌন আদাম এলাকার মঙ্গল চন্দ্র চাকমার ছেলে।
মৌন আদামের স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি কুমার চাকমা বলেন, সোমবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে রাঙা চোগা নিজের মুরগির ঘর মেরামতের জন্য বাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে গাছ সংগ্রহ করতে গেলে বাঘের মুখোমুখি হয়। বাঘ তার ওপর ঝাঁপিয়ে আক্রমণ করলে তার মুখের বাম পাশের এক অংশ ছিঁড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাম কান ও চেখের একটা অংশ এবং হাতের তালু ছিঁড়ে। এছাড়া শরীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় জখম হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে বাঘ কামড় দিতে পারেনি। রাঙা চোগা চিৎকার করলে বাঘটি তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকাটি খুব দুর্গম হওয়ায় এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব নাজুক। পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। আমরা তাকে উদ্ধার করে আমাদের গ্রাম থেকে ২ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে তাকে কাঁধে করে ফকিরাছড়া গ্রামে নিয়ে গেছি। বর্তমানে সেখানে এক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। ক্ষত স্থানগুলোতে বহু সেলাই করতে হয়েছে। তবে অবস্থা খুব গুরুতর। বন্যপ্রাণীটি সত্যিই বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার কিনা জানতে চাইলে তিনি আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলেন, রাঙা চোগা নিজেই বাঘটিকে দেখেছে বলেছে। আর আমিও নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকটা বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। আহত ব্যক্তি আমার মামাতো ভাই। ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, বাঘের আক্রমণে রাঙা চোগার মুখ, কান, চোখ এবং হাতসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। সে বর্তমানে ফকিরাছড়া এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এদিকে, বাঘ বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, রাঙামাটিতে যদি বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার থেকে থাকে সেক্ষেত্রে কাচালং সংরক্ষিত বনের দিকে দুই–একটি থাকতে থাকতে পারে। অন্য এলাকায় থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারলে আরও ভালোভাবে জানা যেতো। তবে আমি ধারণা করছি, লেপার্ড (চিতাবাঘ) হতে পারে। রাঙামাটিতে লেপার্ডের উপস্থিতি আছে। একই কথা জানালেন রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমাও। যিনি সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার গণনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ড. সুপ্রিয় চাকমা বলেন, বন্য প্রাণীর আক্রমণে আহত ব্যক্তি সুস্থ হলে উনার ইন্টারভিউ নিলে জানা যাবে কী ছিল। তবে ইন্ডিয়ান লেপার্ডও হতে পারে। এদিকে, রাঙামাটির উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেভাবে জখম করেছে এতে বোঝাই যাচ্ছে প্রাণীটি বড় ছিল। তবে প্রাণীর শরীর ডোরাকাটা নাকি ছাপ ছাপ ছিল, পায়ের ছাপ দেখতে পারলে বোঝা যেতো। আমরা ধারণা করছি, এটি লেপার্ড হতে পারে।