রাঙামাটিতে ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান মেলা’

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘ট্র্যাডিশনাল নলেজ ফেয়ার২০২৫’। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাঙামাটি জেলা শহরের রাজবাড়ী সড়ক সাবারাং রেস্টুরেন্ট প্রাঙ্গণে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে মেলার উদ্বোধন করেন রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমা। এ সময় তার সঙ্গে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়, টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা, তারুম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি দীপোজ্জল খীসা, রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তা শুভ্রজ্যোতি চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মেলার উদ্বোধন শেষে অতিথিরা বিভিন্ন স্টল প্রদর্শন করেন।

মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিসমূহের ঐতিহ্যবাহী পরিধেয় বস্ত্র, খাবার, ওষুধ, বীজ সংরক্ষণসহ নানান বিষয়াবলির ঐতিহ্যগত বা প্রথাগত জ্ঞান প্রসারে এ মেলার আয়োজন। দুদিনের মেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত নিদর্শন, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও খাবারের স্টল বসেছে। স্টলসমূহের মধ্যে বীজ বৈচিত্র্য, চাকমা, ম্রো, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা খাবার, ফুড কর্নার স্থান পেয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে সাবারাং রেস্টুরেন্টের হলরুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়ের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউএনও রিফাত আসমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সুস্মিতা চাকমা ও শুভ্রজ্যোতি চাকমা। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন দীপোজ্জল খীসা।

ইউএনও বলেন, ট্র্যাডিশনাল নলেজ বা ঐতিহ্যগত জ্ঞান সম্পর্কে কোনো জায়গায় টিকে থাকার জন্য মানুষের যে সাংস্কৃতিক জ্ঞান ঐতিহ্যগত জ্ঞান; সেটাকেই আমরা বুঝি। সেখানকার (স্থানীয়) জাতিগোষ্ঠীর খাদ্যাভাস, পরিধানের বিষয়বস্তু, চলনের বিষয়বস্তু, ওই এলাকায় টিকে থাকার জন্যই কিন্তু তৈরি করা হয়। আগে এখানকার জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ঝিরিঝরনার পানি সংরক্ষণ করে জীবনযাত্রাবাহিত করত, কিন্তু যখন শহরের ছোঁয়া লাগল। সেগুন গাছ আসলো, গাছ কাটছি, তখন হয়তো মনে হল আমরা মাটির নিচ থেকে তো পানি পেতে পারি। এখন কিন্তু আবার পেছনে ফিরে যাচ্ছি, আমাদের যে ভিলেজ কমন ফরেস্ট আছে, তার মাধ্যমেই আমরা পানি সংগ্রহ করে এখানকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে।

চাকমা সার্কেল চিফ বলেন, বিবাহ রেজিস্ট্রির ব্যাপারে আমরা ঠিক এই শব্দটা হয়তো রেজিস্ট্রেশন বলছি না। তবে একই ধরনের দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ‘নথিভুক্তকরণ’ বলে থাকি এবং বছরদুয়েক আগে থেকেই আমাদের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের পক্ষ থেকে এই দাবি ছিল। আমরা মনে করি, হেড কোয়ার্টারে না এসে এটি হেডম্যান পর্যায়ে করা গেলে আরও সহজতর হয়। আমি এ বিষয়ে হেডম্যানদের পরামর্শ দিয়েছে এবং এটি নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। তবে উত্তরাধিকার ইস্যুতে জটিলতা আছে। আমি নিজেও বলেছি যে, নারীর উত্তরাধিকারে অংশগ্রহণ এবং ভূমিবিরোধ সমান না হোক; অন্তত একেবারে জিরোতে না হোক।

চাকমা রাজ কার্যালয় এবং তারুম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ ঐতিহ্যগত বা প্রথাথত জ্ঞান মেলা শেষ হবে শুক্রবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাশে দাঁড়িয়ে আছে মা, ৩ দিনেও উদ্ধার করা যায়নি মৃত হাতি শাবকটি
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে পাচারের সময় ৭ টন কাঁচা রাবার জব্দ