মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করার পর রাখাইন প্রদেশে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের বক্তব্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনও ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে, যাদের মধ্যে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণ করার পর রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। খবর বিবিসি বাংলার।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুচারিচ সোমবার সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইন রাজ্যে এখনো ছয় লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার রয়েছে বন্দী শিবিরে, যেখানে তাদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। তাই আমাদের আশঙ্কা, সামপ্রতিক ঘটনাবলী তাদের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ওই অভিযানের সময় গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটেছে বলে অভিযোগ আনেন জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। সেনাপ্রধান মিন অং লাইংসহ চারজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাখাইনে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা আবারো ঘটতে পারে। তবে মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, ২০১৭ সালে সেনাবাহিনী যে ভুল করেছিল, তার পুনরাবৃত্তি করবে না। মিয়ানমারের মানবাধিকার আইনজীবী এবং রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গঠিত কফি আনান কমিশনের সদস্য ইয়ো লোয়ে বলেন, মিয়ানমারে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে পুরো মিয়ানমারের মানুষ শঙ্কিত। পুরো বিশ্বের নজর এখন মিয়ানমারের দিকে। কাজেই আমার মনে হয় না ২০১৭ সালে তারা যেই ভুলটা করেছিল, সেটি এবারও করবে। তবে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করলেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের যেই নীতি ছিল, তার খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না লোয়ে।