রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দলটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও পথচারী আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাউজান–রাঙামাটি সড়কের হালদা সেতুর অদূরে সর্তারঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়িতরা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী (গত রাতে পদ স্থগিত করা হয়) ও উত্তর জেলা বিএনপির (গত রাতে বিলুপ্ত করা হয়) আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী।
সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় ও একে অপরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। গোলাগুলিও হয়। এ সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান, গোলাম আকবর খোন্দকারের একটি পাজেরো ভাঙচুর করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় তিনটি মোটরসাইকেলে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ছুটে আসেন রাউজান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
গোলাম আকবর খোন্দকার দাবি করেন, তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
আজাদীর প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনের দুই প্রতিনিধি, পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বরাতে জানা যায়, গতকাল বিকালে রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদের কবর জেয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে অংশ নিতে সর্তারঘাট হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকার। এ সময় গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে সর্তারঘাটে পৌঁছান গিয়াস কাদেরের অনুসারীরা। তখন স্লোগান পাল্টা স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঘটনাস্থল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোলাম আকবর খোন্দকারের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন গিয়াস কাদেরের অনুসারীরা। তখন গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীদের পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গোলাম আকবর খোন্দকার বহরের একটি পাজেরো জিপের সামনের ও পেছনের কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গাড়ির ভেতরেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি মোটরসাইকেল।
অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গোলাম আকবর খোন্দকারকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিচ্ছেন তার কর্মীরা। এদিকে বাবার ওপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক আকবর খোন্দকার।
আহতদের পরিচয় : জানা গেছে, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সুমন নামে একজন গুলিবিদ্ধসহ ২৮ জন আহত হন। আহতরা হলেন হেলাল, তাসফি, গাজি সুলতান, রেওয়াজ উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, অনিক, মিরাজ, জনি, রিয়াদ, আজগর, শাহাদাৎ মির্জা, রিবন, আমির, ইমন, সাজ্জাদ, সুমন, সাইমন, রিপন, গিয়াস উদ্দিন মুন্না, তারেক, সোহেল চৌধুরী, রবিউল, আব্দুর শুক্কুর ও সোহেল।
এছাড়া গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের পিএস অর্জুন কুমার নাথ, এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কী বলছেন বিএনপির নেতারা : গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী রাউজান পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুরুল হক বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মোটর শোভাযাত্রায় গোলাম আকবর খোন্দকারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আমাদের কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ ২৫–৩০ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাউকে চমেকে, কাউকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে এবং কাউকে জেকে মেমোরিয়াল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।
গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী উত্তর জেলা যুুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান কাজল বলেন, গোলাম আকবর খোন্দকার আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে আগামীকাল আমরা কর্মসূচি ঘোষণ করেছি।
বিএনপির উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ দাবি করেছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ প্রচারণা র্যালি ও সমাবেশে খোন্দকার সমর্থকরা ফটিকছড়ি থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে হামলা করেছে।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী জিএম মোরশেদ বলেন, আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কয়েকটি মোটরসাইকেল ও একটি পাজেরো ভাঙচুর করা হয়েছে।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি হাসপাতালে আহত কর্মীদের চিকিৎসায় ব্যস্ত আছেন বলে জানান।
গোলাম আকবর খোন্দকারের সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা তার ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সুলতানপুরে যাচ্ছিলাম। সর্তারঘাট এলাকায় আমাদের ওপর আক্রমণ হয়। গোলাম আকবর খোন্দকার সাহেবের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আরো কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়েছে। কমপক্ষে ২০–৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ এসে হামলাকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর আমরা অন্য গাড়িতে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছি।
পুলিশের বক্তব্য : গোলাম আকবর খোন্দকারের প্রয়াত বিএনপি নেতার কবর জেয়ারতে যাওয়ার কথা ছিল। উনি আসার সময় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে যাওয়ার সময় মুখোমুখি হলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই গ্রুপের ১৫–২০ জনের মতো আহত হয়েছেন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি এড়িয়ে যান ওসি মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কেউ থানায় অভিযোগ বা মামলা করেনি।
রাউজান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওসির ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বাইকের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।