রাঙ্গুনিয়ায় অর্ধ শতাধিক বাগানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা, সড়কের পাশে গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে মধুফল হিসেবে খ্যাত অসংখ্য কাঁঠাল। উৎপাদিত এসব কাঁঠালে সয়লাভ এখন বাজার। চলছে কাঁঠালের জমজমাট বেচাকেনা। রসে ভরপুর, মিষ্টি ও শক্ত কোয়ার কারণে রাঙ্গুনিয়ার কাঁঠালের আলাদা সুখ্যাতি থাকায় স্থানীয় বাজার থেকেই বেপারিরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সারাদেশে। অনেকে সখের বশে বাড়ির আশেপাশে কিংবা পাহাড়ি এলাকায় কাঁঠাল বাগান করে লাখ টাকা উপার্জন করে হয়েছেন স্বাবলম্বী।
তেমনি একজন উদ্যোক্তা মুহাম্মদ বাচা মিয়া। পেশায় কৃষক হলেও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পূর্ব নেজামশাহ পাড়া এলাকার অট্টইতল নামক এক পাহাড়ি জনপদে তিনি গড়ে তুলেছেন সবুজ বাগান। সেই বাগানে উৎপাদিত কাঁঠাল বিক্রি করে এবার তিনি লাখ টাকা উপার্জন করেছেন বলে জানান। শুধু তিনিই নন, একইভাবে উপজেলা পারুয়া, রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, লালানগর, হোসনাবাদ, চন্দ্রঘোনা–কদমতলী, পোমরা, পৌরসভা, সরফভাটা, শিলক, কোদালা, পদুয়া, বেতাগী, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের পাহাড় ও সমতলের অর্ধ শতাধিক উদ্যোক্তা গড়ে তুলেছেন পরিকল্পিত কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলের বাগান। সরেজমিনে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বাচা মিয়ার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে মধুফল কাঁঠাল। তার বাগানে রয়েছে ১০০টি কাঁঠাল গাছ, ১০০টি আমগাছ, ৬০টি পেয়ারা
গাছ, ৫টি গোলাপজাম, ৫টি দেশীয় জাম, ২৫টি সুপারি গাছ, লিচু, সেগুন, এবং বড়সড় বেশ কয়েকটি বাঁশঝাড়। এই বাগান থেকে তিনি ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল, ৩০ হাজার টাকার আম এবং ২০ হাজার টাকার বাঁশ।
তিনি জানান, ২০০৪ সালে এক হেক্টর সরকারি খাস জমিতে তিনি রোপণ করেন নানা প্রজাতির এসব ফলজ ও ঔষধি গাছ। এর আগে, ১৯৯১ সালেই তার কৃষিতে হাতেখড়ি ঘটে। তখন বাবার সঙ্গে কয়েকটি কাঁঠাল চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় গাছগুলো আজ পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে তার লাগানো কাঁঠাল গাছগুলো এবার দিয়েছে বাম্পার ফলন। বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক কাঁঠাল গাছের প্রতিটিতে ২০ থেকে ৩০টি কাঁঠাল ধরেছে। এর মধ্যে দুটি গাছে রয়েছে প্রায় ৪০০টি করে কাঁঠাল, যা অভাবনীয় ফলন হিসেবে বিবেচিত। কৃষক বাচা মিয়া বলেন, আমি প্রতিবছর এই বাগান থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মতো আয় করি। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ উদ্যোগকে আরও বড় করতে চাই।
মো. রহিম উদ্দিন নামে স্থানীয় একজন জানান, বাঁচা মিয়ার এই প্রচেষ্টা শুধু তার জীবিকার উন্নয়ন নয়, বরং স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। প্রমাণ করেছে, পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করলে পাহাড়ি জমিতেও কৃষিতে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
উপজেলার ইছাখালী বাজারে চট্টগ্রাম রাস্তারমাথা এলাকা থেকে এসেছেন বেপারী মো. রাসেল। তিনি বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় উৎপাদিত কাঁঠালগুলো বেশ রসালো, কোয়া শক্ত এবং পাকাপোক্ত। তাই এর বেশ কদর। আমরা এসব কাঁঠাল সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ও সারাদেশের বড় বড় বাজারগুলোতে সরবরাহ করে থাকি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, রাঙ্গুনিয়ার মাটিগুলোতে মৌসুমী ফলমূল বেশ ভাল ফলে। বিশেষ করে কাঁঠাল চাষে এ মাটি অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠালগুলোর আলাদা কদর রয়েছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষে এখন অনেকেই এগিয়ে আসছেন। আমরা তাদের যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করে থাকি।