রশীদ ঠেন্ডলের ঠাট, নজুমিয়ার হাট…

চাটগাঁইয়া শ্লোকে নিজ গ্রামকে তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা, আবেগাপ্লুত বাথুয়াবাসী

রাউজান ও হাটহাজারী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় তার পৈতৃক নিবাস ১৪ নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে এসে দাদাদাদী ও স্বজনদের কবর জিয়ারত করেছেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার বাড়ির ৫০ গজ দূরে নির্মাণ করা মঞ্চে উঠে গ্রামবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। শুরুতে সবাইকে সালাম দিয়ে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘অঁনরা কেন আছন’ বলে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। এসময় শ্লোকে শ্লোকে নিজের গ্রামের ঐতিহ্য তুলে ধরে তিনি বলেন– ‘আবদুর রশীদ ঠেন্ডলের ঠাট, নজুমিয়ার হাট, জুনু মিয়ার জালাবারি, ফোরক মিয়ার মোটর গাড়ি।’ বলেন, হেত্তে আঁরার দাদা ওল মোটর গাড়ি লই আইশ্যি। নজু মিয়াহাট শর অঁইয়ি, শহর বিলাত অঁইয়্যি। এরপর প্রশ্ন করেনকেন লার? সবাই সমস্বরে বলেনভালা লার। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দেন আরো হবে।

তাঁর শ্লোকগাঁথা বক্তব্যে হাজারো মানুষের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। নিজ গ্রামের সন্তান বিশ্বনন্দিত এই কৃতিকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বাথুয়াবাসী। অনেকেই চিৎকার করে বলতে থাকেন, আগামী পাঁচ বছর চাই আপনাকে। এসবের ফাঁকে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাজইন্যা স্কুলে লেখাপড়া করেন। এরপর বাবা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর তাঁকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে গিয়ে সেখানে স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরে সকলের দোয়া চেয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা গ্রামের বাড়িতে আগমনকে ঘিরে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ির চতুর্দিক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। এলাকার সন্তানের নিজ বাড়িতে ফেরার খবরে স্থানীয়দের মধ্যে খুশির আমেজ ছিল চোখে পড়ার মত। তাদের প্রত্যশা ছিল তারা সকলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন। কিন্তু নিরাপত্তা জনিত কারণে সে সুযোগ ছিল না। নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক লোককে নিরাপত্তা কার্ড প্রদান করা হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক লোকজন গ্রামের সন্তানকে এক নজর দেখতে অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে ছুটে আসেন।

প্রধান উপদেষ্টার আগমন ঘিরে প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে থেকে বাথুয়া গ্রামের তাঁর পৈতৃক বাড়ি হাজী এম নজুমিয়া সওদাগরের বাড়িঘর ধুয়ামোছা, পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন ও সংস্কার কাজ শুরু হয়। যা গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত চলে। প্রফেসর ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার পর একবার গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। সেই সময় এলাকাবাসী তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছিল। দীর্ঘ সময় পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হওয়ার পর গতকালই প্রথম তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। অবশ্য বিদায়কালে বাথুয়াবাসীকে গ্রামে আবারো আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইএমএফের ঋণের দুই কিস্তি জুনের মধ্যে, ডলার দর বাজারভিত্তিক : গভর্নর
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬