ঈদ ও রমজানকে ঘিরে চট্টগ্রামে প্রতি বছরই বাহারি নামে ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য বাড়ে। এবারও একই কায়দায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধী চক্র। বাহারি নামের অপরাধী চক্রের মধ্যে আছে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টি, পা পাড়া পার্টি, ল্যাং মারা পার্টি, ঢিল পার্টি, হাফ প্যান্ট পার্টি, টানা পার্টি, ছোঁ মারা পার্টি, ডলার পার্টি, লাগেজ পার্টি ইত্যাদি। রমজানের আগে বিশেষ অভিযানে অর্ধশতাধিক ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও অজ্ঞান পার্টি সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে। তাই জনগণের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে ভিন্নধর্মী কৌশল।
আগের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও এখনো থেমে নেই চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। হরহামেশাই এসব ঘটনার খবর মিলছে। দুর্বৃত্তরা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত নিরিবিলি সড়ক, ফ্লাইওভার, রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালের আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতি করে বেড়ায়। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন চট্টগ্রাম সফরকালে যদিও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সবাই মিলে আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এমন নয় যে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে নগর জুড়ে প্রতারণার নানা ফাঁদ পেতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারক চক্র। বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে। দিনদুপুরে বাসাবাড়ির দরজার তালা ভেঙে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। পুলিশ অতীতে সংঘটিত হওয়া দুর্ধর্ষ চুরি বা ডাকাতির অধিকাংশ মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে এখন পর্যন্ত কূলকিনারা করে উঠতে পারে নি। নতুনগুলোর কোন খবর নেই।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিন দিন নগরীর পাড়া–মহল্লায় দিনে কিংবা রাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির তৎপরতা বেড়েই চলেছে। প্রতিটি থানা এলাকায় প্রতিদিনই মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটছে। ছিঁচকে চোর–ছিনতাইকারীরা রাস্তায় পথচারী ও যাত্রীদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার টান দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বলছে, আসন্ন রমজান ও ঈদ সামনে রেখে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রমজান ও আসন্ন ঈদের নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, অজ্ঞান ও মলম পার্টির দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু শান্ত, কোলাহল মুক্ত ভোরকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে এ ধরনের অপরাধীদের নিয়মিতই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু গ্রেপ্তার করারস পর জামিনে বেরিয়ে এসে ফের তারা এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
প্রতিদিনই নগরীর অলিগলিতে চুরি, ছিনতাই–চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। ছিনতাইকারীদের হাতে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু আহত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে কম। অস্ত্র ঠেকিয়ে বেশি ছিনতাই হয়। কখনো কখনো পরিচিত ব্যক্তির ভান করে থামিয়ে ছিনতাই হয়। চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে করে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের চিহ্নিত অপরাধীদের সঙ্গে পাশের জেলাগুলো থেকে আসা চোর, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। চুরি ও ডাকাতির জন্য মাসিক–দৈনিক মজুরিতে কিশোর–যুবকদের ভাড়া করছে অপরাধী চক্র।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নগরীতে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ভাসমান মাদকাসক্ত। যখন তাদের কাছে মাদক কেনার টাকা থাকে না তখনই তারা মোবাইল ছিনিয়ে নিচ্ছে ও পকেট থেকে টান মেরে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিরোধে পুলিশের ক্রাইম বিভাগের টিম ও ডিবির ছিনতাই প্রতিরোধ টিম নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে। সে সব পয়েন্ট থেকে নিয়মিত এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধ প্রবণতাকে শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব নয়। ঈদকে সামনে রেখে অপরাধীচক্র মাথাচাড়া দেয়, সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এর পাশাপাশি জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি আমরা নিজেরা সচেতন ও সতর্ক হই এবং এর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চলতে থাকে তা হলে এসব কর্মকাণ্ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।