রমজান আসার আগে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আরো কমেছে চিনির বাজার। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা। অর্থাৎ কেজি হিসেবে ৮৭ টাকা। গত এক মাস আগে সেই চিনি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯১ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আওয়ামী সরকারের আমলে গুটিকয়েক চিনি ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি ছিল বাজার। ফলে পাইকারিতে চিনির কেজি কখনো ১২০ থেকে ১৫০ টাকার নিচে নামেনি। এখন চিনির আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় যেকোনো ব্যবসায়ী আমদানি করতে পারছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে তাই দামও কমছে। গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একমাস খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। বর্তমানে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২৪০ টাকায়।
চিনি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশের শিল্পগ্রুপ ছাড়াও এখন ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে চিনি আমদানি করছেন। আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় চিনির দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে পাইকারি কমলেও খুচরা বাজারে এখনো চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৮ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারির তুলনায় ১১ টাকা পর্যন্ত বেশি। নগরীর দামপাড়া এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রানা বলেন, আমরা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারিতে প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম উঠানাম করে। সেখানে বাজারটা সেভাবে নির্ধারিত হয়। আমরা অল্প অল্প চিনি এনে বিক্রি করি। বলা যায়, সীমিত লাভে চিনি বিক্রি করে থাকি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও বিক্রি করে। যে দরে ডিও বিক্রি হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যের তুলনায় ডিও বিক্রিও হয় বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির সরবরাহ বাড়ার কারণে দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। পাইকারি বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। সাধারণত চিনির দাম বাড়লে সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ উঠে। আসলে শুধু চিনি নয়, ভোগ্যপণ্যের দাম উঠানামা করে চাহিদা ও যোগানের ওপর। এখন সরবরাহ বেড়েছে তাই দাম কমছে।
মো. মোক্তার হোসেন নামের একজন ভোক্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চিনির বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। অনেক ব্যবসায়ী এখন চিনি আমদানি করতে পারছেন। আগে চিনির দাম উঠানামায় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ জড়িত ছিল। সেই চক্র ভেঙে পড়েছে। তাই বাজারে স্বস্তি নেমেছে।












