রমজান আলী মামুন (১৯৬৭-২০১৯) বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যাঙ্গনে এক পরিচিত নাম। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখেছেন ছড়া, কবিতা ও গল্প। ১৯৯১ সালে বেরিয়েছে তাঁর প্রথম কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘হারিয়ে যাওয়া দুপুরে’। এরপর ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছে আকাশ পরী ও পাপিয়া, এক যে ছিলো রাজকন্যে, দিবা ও রহস্যময় বুড়ো, কিশোর নেমেছে যুদ্ধে, কিশোর উপন্যাস ‘রেল ছোটে মন ছোটে’, কিশোর কবিতাগ্রন্থ ‘নীল ডানা এক পাখি’ ‘সবুজাভ কোন গ্রামে’; ছড়াগ্রন্থ ‘ছড়ার গাড়ি থামবে বাড়ি’। কিশোর কাব্যগ্রন্থ ‘নীল ডানা এক পাখি’ প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। গদ্য ও পদ্য-উভয় অঙ্গনে রমজান আলী মামুন স্বতঃস্ফূর্ত ও নিবেদিতপ্রাণ। সমালোচকদের মতে, ‘রমজান আলী মামুন সেই বিরল সৃজন-কারুকারদের একজন। কিশোর গল্পে যেমন কিশোর কবিতায়ও তিনি একইভাবে উজ্জ্বল। বিষয়ে কল্পনায় বর্ণনায় শব্দে ছন্দে কিশোর মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার এ এক অনন্য প্রয়াস। সাবলীল আয়োজনে ব্যঞ্জনা সৃষ্টির সৎ-চেষ্টা এখানে সুস্পষ্ট।’
প্রকৃতি প্রেম একজন কবির জন্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে অনুভব না করেন এমন কোনো কবি নেই। এজন্যে কবিতার শরীর চিরকালই চিত্রসমৃদ্ধ। সেই আদিকাল থেকে যে সব কবিতা ছোটোদের জন্য রচিত হয়ে আসছে, এবং যে সব কবিতা যুগ অতিক্রম করে বংশ পরম্পরায় আমাদের মনকে আলোড়িত করে যাচ্ছে; তাদের প্রায় সবক’টিই নৈসর্গিক চিত্রসমৃদ্ধ ব্যঞ্জনাময় কবিতা।
ছোটোদের কবিতা তথা কিশোরকবিতা চর্চার সেই ধারাবাহিকতায় পাঠকের কাছে নিজের প্রতিভা নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রমজান আলী মামুন। তিনিও তাঁর পূর্বসুরীদের মতো পাঠকের অনুভূতিকে রঞ্জিত করার জন্য নিঃসঙ্কোচে ছুটে গেছেন প্রকৃতির পাঠশালাতে। ফুল-পাখি-নদী-আকাশ ইত্যাদি নৈসর্গিক উপাদানই হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতার শ্রেষ্ঠ অনুষঙ্গ। রমজান আলী মামুনের কবিতায় দেশপ্রেমের কথা আছে, মুক্তিযুদ্ধের কথা আছে, মায়ের দোয়ার কথা আছে, বোনের স্নেহের কথা আছে, আছে সৃষ্টিকর্তার দয়ার কথা। আছে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের বর্ণনা এবং সর্বোপরি আছে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মধুর দিনগুলোর কথা। তিনি প্রায় সবক’টি কবিতায় তাঁর কাব্যশক্তির স্ফুরণ ঘটাতে চেষ্টা করেছেন। শব্দ-চয়নে, উপমা প্রয়োগে, চিত্রকল্পে তাঁর দু’য়েকটি কবিতা গতানুগতিক হলেও অধিকাংশ কবিতাই হয়ে উঠেছে হৃদয়গ্রাহী। অকপটে মনকে নাড়া দেয়ার অদৃশ্য শক্তি যেনো তাঁর কবিতার শরীরে বিদ্যমান। ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।