পবিত্র রমজান মাসে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে তিন ভাগে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। রমজানের প্রথম ভাগ, মধ্য ভাগ এবং শেষ ভাগে নগরীর যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন রাখতে বাস্তবায়ন করা হবে এসব পরিকল্পনা। ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ বাড়তি পুলিশ দেওয়া হচ্ছে নগরীতে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে সড়কে দায়িত্ব পালন করবে ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও। পুলিশের পাশাপাশি মার্কেটকেন্দ্রিক যানজট সামলাবেন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকরা। মার্কেটকেন্দ্রিক পে–পার্কিংগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগরীর রাস্তাজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি, সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কার্যক্রম, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের চাপ পড়েছে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। এছাড়া নগরজুড়ে অবৈধ পার্কিং, মোড়ে মোড়ে অবৈধ রিকশা, টেক্সি এবং বাসস্ট্যান্ড, হকারদের সড়ক ও ফুটপাত দখল, স্বল্পগতির গাড়ির বেপরোয়া চলাচল তো আছেই। পদে পদে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল। শহরের মূল সড়কগুলোতে বিশ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাতেও সমস্যা হয়।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর মধ্যে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, লালখান বাজার, টাইগারপাস, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার, রেয়াজুদ্দীন বাজার, স্টেশন রোড, কদমতলী, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, জাকির হোসেন রোড, ও আর নিজাম রোড, প্রবর্তক মোড়, মেডিকেলের সামনের পুরো রাস্তাসহ শহরের এমন রাস্তা কমই আছে যেখানে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল রয়েছে। শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তার চিত্র অনেকটা অভিন্ন; চারদিকে গাড়ির জটলা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাফিক আইন না মানার সংস্কৃতি শহরের রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কে কত ক্ষমতাবান তা প্রদর্শনের সুযোগ নেওয়া হয় আইন ভঙ্গ করে। চালকদের অসচেতনতাও ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর পড়ে। তারা বলেন, কার আগে কে যাবে এমন একটি প্রবণতা সড়কে দেখা যায়। যানজটে এক ঘণ্টা আটকে থাকতে পারে, কিন্তু অন্য গাড়িকে এক মিনিটের জন্য সাইড দিতে পারে না। হুড়োহুড়ি করে যানজটের জটলা এমনভাবে পাকায় যে, পুলিশ না আসা পর্যন্ত নিস্তার মেলে না। ওয়ান ওয়ে রোডে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল, সড়কের ব্যারিয়ার না মানা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং সিএনজি টেঙির বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে পুলিশের দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়।
পুলিশ বলেছে, নগরীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা কঠিন বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, শহরের চারটি ট্রাফিক জোনে শতাধিক পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকে। কিন্তু চার বিভাগ মিলে পুলিশ রয়েছে ৯শ জনের মতো; যা দশ বছর আগের লোকবল। এক দশকে শহরের লোকসংখ্যা বহু বেড়েছে, বেড়েছে গাড়ির সংখ্যাও। কিন্তু বাড়েনি পুলিশের সংখ্যা। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প সংখ্যক পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থার বিদ্যমান পরিস্থিতির মাঝে আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। রোজার সময় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা নগর পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ চারটি ট্রাফিক জোনের ডিসিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রমজানে যান চলাচল যাতে স্বাভাবিক থাকে, রোজাদার মানুষ যাতে রাস্তায় যানজটে আটকা পড়ে কষ্ট না পান, সেজন্য প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোনের ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) উপ–কমিশনার জয়নুল আবেদিন আজাদীকে বলেন, রমজান উপলক্ষে তিন ধাপে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ম্যানেজ করা হবে। রোজার মাসকে তিন ভাগে বিভক্ত করে প্রথম, মধ্য এবং শেষ ভাগের জন্য আলাদা আলাদা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের ৯০০ সদস্যের পাশাপাশি মাঠে থাকবে অতিরিক্ত ৩০০ সদস্য। এর বাইরে ঈদের কেনাকাটা শুরু হলে মার্কেটকেন্দ্রিক টিম করা হবে। এতে একজন পুলিশের সাথে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করে যানজট সামলাবেন। প্রতিটি মার্কেটের পার্কিং উন্মুক্ত করে দিতে বলা হয়েছে। পে–পার্কিং রোজার সময় বন্ধ রাখতে হবে। যাতে রাস্তার উপর গাড়ি রেখে কেউ শপিং করতে না যান তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশ ট্রাফিক আইন লংঘন করলে মামলা দেবে।
তিনি বলেন, রোজার সময় দিনে ভারী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া সাধারণ পণ্যবাহী ভারী গাড়ি মূল শহরে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। তবে বন্দরকেন্দ্রিক গাড়ি, ওষুধবাহী এবং ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ির ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা করা হবে। ট্রাফিক পুলিশের সাথে ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন। প্রতিটি থানাকে এই ব্যাপারে কমিশনার মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন।